× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রশাসনিক কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চান না ডিসিরা

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৩৩ এএম

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৩৪ এএম

প্রশাসনিক কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চান না ডিসিরা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। আন্দোলনটা কীভাবে হয়েছিল, কীভাবে আন্দোলনের ফল লাভ হলো, সেই বিবরণও সেখানে থাকবে। এ ছাড়া অভ্যুত্থান-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ডিসিদের বার্তা দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ক্ষমতার থাকার পর সংসদ সদস্য (এমপি) ও জনপ্রতিধিদের আচরণ অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অতীতের এমন তিক্ততা থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আচরণ বিধিমালা প্রণয়ণের প্রস্তাবও এসেছে। বিশেষ করে প্রশাসনিক কাজে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চান না মাঠ প্রশাসনে জেলার শীর্ষকর্তা ডিসিরা। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে প্রশাসনের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ডিসি-ইউএনওদের নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। আবার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথা না শুনলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হুমকিসহ বদলি দেওয়া হতো। সে কারণে এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গতকাল শনিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবটি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে কি না সেটা দেখতে হবে। গত ১৫ বছরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিগত সরকার দলীয়ভাবে ব্যবহার করেছে। এ কারণে হয়তো প্রস্তাবটি এসেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শাপলা হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বছর চার দিনের বদলে তিন দিনের সম্মেলন হচ্ছে। গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কমেছে। এ পর্যন্ত ২০২৪ সালের সম্মেলনের মাত্র ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি জানান, এ বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সাক্ষাৎ হচ্ছে না। তবে প্রধান বিচারপতি, দুদক চেয়ারম্যান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক হবে। গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭৭টি। বাস্তবায়নাধীন ২০৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ শতাংশ। তিনি বলেন, যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনাধীন, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেসব সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ/অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/কার্যালয়ের যথাযথ তৎপরতা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪-এ গৃহীত সিদ্ধান্তের শতকরা ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত জেলা প্রশাসক সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়বে। গত বছর (২০২৪) ডিসি সম্মেলন চলাকালে এর আগের বছরের (২০২৩) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশ, ২০২৫-এ এসে দেখা গেছে ২০২৩-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৭৬ শতাংশ বলেও জানান শেখ আব্দুর রশীদ। গত ডিসি সম্মেলনে নেওয়া বিভিন্ন স্থাপনার নাম বিশেষ কোনো ব্যক্তির নামে করার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বছরের মতো এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার। সম্মেলনে এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট কার্য-অধিবেশন হবে ৩০টি এবং চারটি হবে বিশেষ অধিবেশন। বিশেষ অধিবেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ, প্রথম উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও একটি সভা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট, ২৮টি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হচ্ছে না। অন্যান্য বছর থাকলেও এবার কেন তা হচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওনার (প্রেসিডেন্টে) শিডিউলের সঙ্গে মেলেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনের বাজেট ছিল ২ কোটি টাকার কিছু বেশি। এবার আমরা ১ কোটি ৭০ লাখ বা এর কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করব। আশা করছি এর থেকে কিছু টাকা আমরা বাঁচাতেও পারব ইনশাআল্লাহ। 

সম্মেলনের প্রত্যাশিত ফলাফল 

মাঠ পর্যায়ে কর্মসম্পাদনকালে জেলা প্রশাসকরা যে সব আইনগত, প্রশাসনিক, আর্থিক কিংবা অন্যবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন এবং স্ব স্ব জেলায় যেসব সম্ভাবনা বিদ্যমান সেসব বিষয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের উপদেষ্টা/বিশেষ সহকারী/সিনিয়র সচিব/সচিবগণের উপস্থিতিতে আলোচনা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পন্থা নির্ধারণ এবং বিদ্যমান সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগানোর উপায় নির্ধারণ। মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের অনুসৃত নীতি-কৌশল ও গৃহীত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসকগণ কর্তৃক সম্যক ধারণা লাভ, পর্যটন বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসেবা বৃদ্ধি এবং পন্থায় সরকারের নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিতকরণ এবং নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা