প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৫ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৩ পিএম
বিডিআর বিদ্রোহের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পরিবারের ‘শহীদ সেনা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ। প্রবা ফটো
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় যে সমস্ত বিডিয়ার সদস্য দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের জামিন বা মুক্তি না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান পিলখানা শহীদ সেনা পরিবার।
সংবাদ সম্মেলন তারা অভিযোগ করেন, পিলখানার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানাভাবে
শহীদ পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ হুমকির ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া
তারা সংবাদ সম্মেলন করে পিলখানা হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তি না
দেওয়ার দাবি জানানোর পর থেকেও নানা হুমকি পেয়েছেন।
পিলখানা শহীদ সেনা পরিবারের সংগঠন ‘শহীদ সেনা
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে
এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের আহ্বায়ক পিলখানায় নিহত শহীদ
কর্নেল মজিবুর হকের স্ত্রী নারিন ফেরদৌস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারবর্গের জন্য
ফেব্রুয়ারি মাসটি অনেক কষ্টের। আমরা দিন গুণতে থাকি যে মাসটি কখন শেষ হবে।
সংবাদ সম্মলনে বলা হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারবর্গ ‘শহীদ সেনা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন করেছে।
আজ এটি আত্মপ্রকাশ করা হলো। ইতোমধ্যে এ সংগঠনের
একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
আমরা এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস
ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এ দাবি গত ১৬ বছর
ধরে আমরা করে আসছি।
আমরা শহীদ পরিবারের পক্ষে গত ১৬ বছর ধরে প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি। গত ১৬ বছর ধরে শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে একসাথে
এতদিন ধরে সম্মিলিতভাবে সংবাদ সম্মেলনগুলো করে এসছি। ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের
যে কোনো শহীদ পরিবারের সদস্য এই এসোসিয়েশনের সদস্য হতে পারবেন। সম্মিলিত শহীদ পরিবারের বক্তব্য প্রয়োজন হলে শহীদ সেনা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করবার জন্যে অনুরোধ করা হলো।
আমাদের একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে,
www.shaheedshenaassociation.com, এবং শহীদ সেনা এসোসিয়েসন নামে ফেসবুক পেজ রয়েছে,
যেটা দ্বারা আমরা নিয়মিত আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরব।
এই শহীদ সেনা অফিসার্স এসোসিয়েশন দ্বারা আমরা বিভিন্ন কার্যকলাপের
মাধ্যমে শহীদ অফিসারগণের নিজ নিজ অবদান তুলে ধরব। আমরা বিশ্বাস করি যে তারা এদেশের
সম্পদ এবং সম্মানের সাথে তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এই এসোসিয়েশন মিলাদ মাহফিল
ছাড়াও, বিভিন্ন এক্সিবিশন, বই প্রকাশনী, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য সামাজিক
উদ্যোগের সাথে যুক্ত থাকবে। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোতে আমরা বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক
কাজ করেছি। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম এবং হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় সুবিধাবঞ্চিত
মানুষের কল্যাণে অনুদান প্রদান করেছি। এবং সেসব কাজ আমরা এখন থেকে এই শহীদ সেনা
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে অব্যহত রাখবো।
গত ১৬ বছর ধরে আমরা শহীদ পরিবারবর্গ, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে যেন
শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেই দাবি করে এসেছি। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি
সেনাপ্রধান শহীদ পরিবারের একটি প্রতিনিধি দলকে সেনা সদর দপ্তরে আমন্ত্রণ জানান এবং
আমাদের আশ্বাস দেন- এই দিনটিকে যেন "জাতীয় শহীদ সেনা দিবস" হিসেবে ঘোষণা
করা হয়, এই মর্মে সেনাবাহিনী সরকারের কাছে জোড় আবেদন জানাবে।
আমরা শহীদ পরিবার মনে করি, এই দিবসটি গেজেট আকারে ঘোষণা দেয়াটা শুধুমাত্র
শহীদ পরিবার নয়, গোটা সেনাবাহিনী ও তাদের প্রাক্তন সদস্যগণসহ গোটা দেশবাসীর সম্মিলিত
দাবি। আমরা আশা করছি যেন এই ২৫ ফেব্রুয়ারির আগেই সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেশবাসী
এই সুখবরটি পাবে।
অবশেষে, শহীদ পরিবারের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পেরে ৩১ জানুয়ারি সহনশীলতার
সঙ্গে যে ৬ দফা দাবি বিডিআর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক
আয়াতুল্লাহ বেহেশতি, মাহিন সরকার এবং ছাত্ররা পেশ করেছেন, সে কারণে অবশ্যই ধন্যবাদ
দিতে হয়।
শহীদ সেনা অফিসার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের যে কোনো মানুষের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার আছে। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে সবাই যেন ন্যায় বিচার পায়। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের চলমান বিচার প্রক্রিয়া, নবগঠিত কমিশন বা অন্যান্য আইনি বিষয়সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি বিষয়ে শহীদ পরিবারের মন্তব্য জানতে চাইলে আমাদের নির্ধারিত প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
জেলের ভেতর যে সমস্ত বিডিআর সদস্যদের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে, এই
রহস্যও উন্মোচন করা প্রয়োজন। ঘটনার পেছনের
ষড়যন্ত্রকারীরা আছে বলেই নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে শহীদ পরিবারবর্গ।
গত ২৯ জানুয়ারি প্রেস কনফারেন্সের পর আমরা শহীদ পরিবারবর্গ দাবি করেছিলাম, যেন ন্যায় বিচারের স্বার্থে হত্যা মামলার আসামিদের আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া না হয়। এরপর থেকে আমরা, আমাদের সদস্যরা কিছু মহল থেকে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। আমি একটি বিষয় জোর দিয়ে বলতে চাই, শহীদ অফিসারদের স্ত্রী অথবা সন্তানদের উপর যে কোন ধরনের আঘাত কিংবা তাদের সম্পর্কে যে কোনো ধরণের অবাঞ্চিত, ভুল বা বিদ্রুপ মন্তব্য বা বক্তব্য দিলে আমরা এই শহীদ সেনা অফিসার্স এসোসিয়েশন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাব এবং আইনের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হবে।