তৃতীয় দিনে সারা দেশে গ্রেপ্তার ৬০৭

অপারেশন ডেভিল হান্টে সারা দেশে নতুন করে ৬০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও এক হাজার ১৬৮ জনকে। গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত এই ১ হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সারা দেশে এই বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন চার হাজার ৬০৪ জন।

অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে রাজধানীতে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের দোসররা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। তবে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের পর দেশে আর কোনো ডেভিল থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে জড়িত কোনো আসামি যাতে জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দিতে হবে। 

অভিযান নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিস ও প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্য-

অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে গত সোমবার নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যৌথ বাহিনীর গাড়িতে ককটেল হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় যৌথ বাহিনী ২৪ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, হাতিয়ার চরকিং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নবীর উদ্দিন ও ইমাম হোসেন।

যৌথ বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ১১টার দিকে নৌবাহিনী কন্টিনজেন্টের কমান্ডার আফসার আহমেদের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী বাশার মার্কেট এলাকার কাউছার মিয়ার ব্রিকফিল্ডের সামনের মাঠে গেলে সন্ত্রাসীরা গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে। যৌথ বাহিনী গুলি ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে নবীর উদ্দিন ও ইমাম হোসেনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি একনলা দেশীয় বন্দুক, আটটি কার্তুজ, ২০টি ককটেল, দুটি ডেগার, তিনটি কিরিচ ও একটি তলোয়ার উদ্ধার করা হয়। 

মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনী কন্টিনজেন্টের কমান্ডার আফসার আহমেদ হাতিয়া থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সোমবার রাতে আমাদের ওপর হামলা হলে আমরা আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই। পরে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করি। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। 

গাজীপুরে ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর ৮ থানায় ৬৯ জনকে এবং জেলার ৫টি থানায় গ্রেপ্তার ১২ জন। এ নিয়ে জেলাটিতে গত শনিবার থেকে ২৪৬ জন গ্রেপ্তার হলেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) আলমগীর হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

নড়াইলের ভওয়াখালী এলাকা থেকে সোমবার রাতে অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল ইসলাম রকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৪ আগস্ট নড়াইলের চিত্রা সেতু এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করে পুলিশ। 

ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাসহ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মাহফুজা খাতুন।

অপারেশন ডেভিল হান্টে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পটুয়াখালীর দুমকিতে বিএনপির অফিস ভাঙচুর মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেতা ইমন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

নেত্রকোণা শহরের পাটপট্টি এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার বিকালে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে রাখা কয়েক প্রকার দাহ্য পদার্থ জব্দ এবং ইদ্রিস আলী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। 

নারায়ণগঞ্জে অপারেশন ডেভিল হান্টে ২০ জন এবং অন্যান্য অভিযানে আওয়ামী লীগ নেতাসহ মোট ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানা থেকে লুট হওয়া একটি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক শাহ আলী বলেন, অস্ত্রটি গত বছরের ৫ আগস্ট টঙ্গিবাড়ী থানা থেকে লুট হয়। মৌলভীবাজারে দুদিনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাঁদপুর শহরে এলজি গান, ৩ রাউন্ড গুলি, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক কমিশনারসহ ৪ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। 

ফেনীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় দুই জনপ্রতিনিধিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।