প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪০ পিএম
চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহালের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। প্রবা ফটো
বিগত সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ভিকটিম পুলিশ পরিবার। এ ছাড়াও ১৫২২ জন পুলিশ সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহালের সংবাদকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে ‘ভিকটিম পুলিশ পরিবার' ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। এই দীর্ঘ সময়ে স্বৈরশাসক দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। তার মধ্যে অন্ততম বাংলাদেশ পুলিশ। বিগত সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনে চাকুরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই ফলস্বরূপ জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে পুলিশ বাহিনীর কিছু সিনিয়র দানবদের অবৈধ আদেশ পালন করে চাকরি বাচাতে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও গণহত্যার মতো অপরাধ করতে বাধ্য হয়।
তারা বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ঙ্কর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকুরিচ্যুত করেছে। বিভাগীয় মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ন্যায় সঙ্গত কোন প্রকার প্রসিডিউর অনুসরন করেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা, তদন্ত, মিথ্যা স্বাক্ষ্য গ্রহণসহ সকল কিছুতেই তাদের পক্ষের একতরফা নীতি অনুসরণ করেছে। তারা এমনভাবে মামলা সৃজন করেছে যেন, আদালত থেকেও কোনভাবে বিবাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারে। বিজ্ঞ আদালত হতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রায় পাওয়ার পরেও আমাদেরকে চাকরিতে পূনর্বহাল করেনি।
চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকা স্বত্ত্বেও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও অন্যান্য অনুমোদনহীন হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিরীহ পুলিশ সদস্যদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে। বেশিরভাগ চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি। ডোপ টেষ্টে যারা মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েছে বা যারা স্বৈরাচারী সরকারের লোক ছিলেন তাদেরকে বহাল রেখেছেন। আর যারা টাকা দিতে পারেনি তাদেরকে চাকরিচ্যুত করেছেন। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন তাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন।
তারা বলেন, বিগত স্বৈরাচারের দোসদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কিছু পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করতে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছেন। ২০০৭ সালে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের দোসরার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ছোট-খাটো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুত করেছেন।
তারা আরও বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার অব: এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় সকল পুলিশ সদস্যকে পূনর্বহালের আদেশ প্রদান করার পরেও স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা তা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছেন। অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করার পর যদি বিজ্ঞ আদালতে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তাহলে গুম খুনের হুমকি দিয়েছেন। এসবের ভয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আদালতে মামলা করতে পারেনি। অনেক পুলিশ সদস্যকে জোর পূর্বক অথবা স্বাক্ষর জাল করে চাকরি হতে সেচ্ছায় অবসর বা বাধ্যতা মূলক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। পুলিশ প্রধান পিআরবি ৮৮৪ প্রবিধান মতে সকল চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলেও বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের বাধার কারণে তা প্রয়োগ হচ্ছে না।
চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে এই পুলিশ সদস্যরা বলেন, আজকে যখন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে তখন পুলিশ বাহিনীর কিছু পুরাতন দোসর আমাদেরকে চাকরিতে পূনর্বহালের কথা দিয়েও তালবাহানা করছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি, আমাদেরকে সকল সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পূনর্বহাল করা হোক এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম পরিবারের সমন্বয়ক এসআই মামুন, সমন্বয়ক এসআই জাকারিয়া, মুখপাত্র এএসআই তৌহিদ মন্ডল, ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক এএস আই সাইফুল, সমন্বয়ক কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন, সমন্বয়ক কনস্টেবল আরাফাতসহ আরও অনেক চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।