প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৫ পিএম
ছবি: ইন্টারনেট
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে নতুন এক বিবদপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতি মাসে আদানিকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে, কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য আদানির কাছে দাবি জানিয়েছে। খবর: রয়টার্স।
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে, ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি গ্রুপের ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দীর্ঘ তিন মাস ধরে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। শীতকালে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যাওয়া এবং অর্থ পরিশোধ নিয়ে বিরোধের কারণে, বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হয়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ, ১ নভেম্বর থেকে এক ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাত্র ৪২% ক্ষমতায় পরিচালিত হতে থাকে।
২০১৭ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাথে আদানির মধ্যে একটি ২৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার অধীনে আদানি তাদের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। তবে, বকেয়া অর্থ পরিশোধে সমস্যার কারণে গত অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক হয়ে গেছে এবং এক ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। এখন, বিপিডিবি তাদের মাসিক পরিশোধ ৮৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করে, তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, আদানি গ্রুপের দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার জন্য তারা প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক চাহিদা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ইউনিটের কম্পনজনিত কারণে এটি সম্ভব হয়নি।’’ এ ব্যাপারে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের আদালত আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি এই চুক্তির শর্তসমূহ পর্যালোচনা করছে এবং এ প্রক্রিয়া চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই পর্যালোচনার ফলস্বরূপ চুক্তির শর্তাবলী পুনঃআলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বিরোধের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ট্যারিফ নির্ধারণ। ২০১৭ সালের চুক্তিতে দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ফলে আদানি থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার মূল্য ভারতীয় অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় ৫৫% বেশি হয়ে থাকে। এই মূল্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে।
এছাড়া, গত নভেম্বর মাসে মার্কিন প্রসিকিউটররা আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি এবং আরও সাতজন নির্বাহীর বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনেছেন। তবে, আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একে ‘‘ভিত্তিহীন’’ বলে অভিহিত করেছে।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি পর্যালোচনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তবে এখনও দু'পক্ষের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ট্যারিফ সংক্রান্ত কিছু বিতর্ক মীমাংসিত হয়নি। এসব বিষয়ে সমঝোতার জন্য ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হতে পারে।