দলগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন : প্রেস সচিব

আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন তা সব রাজনৈতিক দলের চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, যদি সব পার্টি বলে যে আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন চাই, সেক্ষেত্রে উনি তো (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন। এমন নয় যে উনি একটি জায়গায় স্থির রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপর এটা নির্ভর করবে।

গতকাল সোমবার রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজটাই হবে এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করা। নির্বাচন চলতি ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হওয়ার ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন ওনারা দ্রুত চাচ্ছেন, এই ডিসেম্বরেই চাচ্ছেন। আমাদের তরফ থেকে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে জানবেন।

বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে- সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানবেন।’

গণহত্যা, দুর্নীতি, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ শান্তির রাজনীতি করতে চান। আমরা চাই সেই পরিবেশটা শুরু হোক। সেই আলোকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। সংস্কার কমিশনের ছয়টি প্রতিবেদন নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। প্রথম বৈঠকটি একসঙ্গে সব দলের সঙ্গে হবে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, তারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় জোর দিয়েছেন। অন্যায়-অত্যাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ যাতে দ্রুত হয় সেগুলোর জন্য বলেছেন।

আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিএনপি আলোচনা করেছে বলে জানান প্রেস সচিব। 

অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়েও বিএনপি প্রতিনিধি দল কথা বলেছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তারা বলেছেন এখানে যেন মানবাধিকারের কোনো রকমের লঙ্ঘন না হয়। প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকেও বলা হয়েছে- কোনভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেওয়া যাবে না। যারা অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে যুক্ত, সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরকে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আনা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি করা হচ্ছে। কোনোরকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন চায় না, হবেও না। 

গায়েবী মামলার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলে বিএনপিকে বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন বলেও জানান প্রেস সচিব।

বিএনপির তরফ থেকে সংস্কারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে- আপনারা সংস্কার করবেন তা আমরা চাই। আমরা সব কমিশনে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আপনাদের সঙ্গে আছি।

বিএনপি স্থিতিশীলতার দিকে জোর দিয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দেশে শান্তি ফিরে এসেছে, দেশে কোনো ধরনের ভাঙচুর দেখছি না। পরিস্থিতি এখন নরমাল। একইসঙ্গে বিএনপি এসব ঘটনায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার পেছনে তারই ভূমিকা রয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনায় সরকার দায় এড়াতে পারে না- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই আজ বা কালের মধ্যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বই মেলায় সব্যসাচীর স্টলে ভাঙচুরের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দ্রুত ঘটনা জানাতে বলেছি। কারণ পুরো ঘটনা আমরা এখনও জানি না। বইমেলা খুবই পবিত্র জায়গা। সেই পবিত্রতা আমরা রাখতে চাই।