যাত্রী কল্যাণ সমিতি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২৭১ জন। রেলপথে ৫৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৯ জন, আহত হয়েছেন ২৩ জন এবং নৌপথে ১৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮ জন, আহত ৯ জন এবং নিখোঁজ হয়েছেন ৫ জন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৯৬টি জাতীয়, আঞ্চলিক, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
এতে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে সর্বমোট সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭৩২টি দুর্ঘটনায় ৭৫৪ জন নিহত এবং ১৩০৩ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় ঢাকা বিভাগে, সবচেয়ে কম হয় ময়মনসিংহ বিভাগে।
এর মধ্যে ২৮৯ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০১ জন নিহত ও ২৩৯ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ১৫৬ বাস দুর্ঘটনায় ১৫৯ নিহত ও ৪৫২ জন আহত হয়েছেন এবং ১৬৩ ব্যাটারিচালিত-ইজিবাইক-নসিমন-অটোরিকশা-মাহিন্দ্রা দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত ও ৩৩৬ জন আহত হয়েছেন।
এই মাসের সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৩৮২ জন চালক, ২৩৮ জন পথচারী, ১৮৮ জন শ্রমিক, ১৫১ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন শিক্ষক, ১৭১ জন নারী, ২১ জন শিশু, ৮ জন সাংবাদিক, ৩ জন চিকিৎসক, ১২ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ৪১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে সকালে। সবচেয়ে কম মধ্যরাতে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭.৮০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.৭৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.০৪ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে। এছাড়াও মোট দুর্ঘটনার ৩.৬৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.০৪ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০.৬৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশও করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেগুলো হলো-
১. দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।
২. দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা।
৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা।
৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করা।
৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬. গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা।
১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা।
১২. সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু করা।
১৩. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।