সংস্কার
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৩ এএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত
জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি)। দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৃথকভাবে প্রতিবেদন দুটি জমা দেওয়া হবে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে শতাধিক সুপারিশ থাকছে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশনসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দেশের পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করার সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ব্যবস্থাপনা প্রদেশের হাতে দেওয়ার পক্ষে কমিশন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে চারটি প্রদেশ করা। সেগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা। এসব প্রদেশের পরিচালনা কাঠামো কেমন হবে সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ থাকছে। অন্য ক্যাডারের জন্যও ৫০ শতাংশ কোটা থাকছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা কমিশনে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন (পরিচয়-ঠিকানা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ইত্যাদি যাচাই) প্রথা উঠিয়ে দেওয়া, তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রতিটি জেলায় একজন করে কর্মকর্তা রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন।
জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে শতাধিক সুপারিশ থাকছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল গত মাসে। কিন্তু নানা কাজের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মাঠের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যেতে হয়েছে। এমনকি অনলাইনে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য সব পক্ষের মতামত গ্রহণ করে সেসবের ভিত্তিতে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। কাল বুধবার (আজ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সবাই জানতে পারবেন। জমা দেওয়ার পর সবাই জানুক। তাতে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের একগুচ্ছ সুপারিশ
জানা গেছে, নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। এর মধ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা, উপজেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন অন্যতম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ১ মাস ৩ দিনের মাথায় রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে একাধিক কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বহুল আলোচিত ছয়টি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান হন সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন। বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান করা হয় সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে।
এ ছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান করা হয়। আর জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয় অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান হন সাংবাদিক কামাল অহমেদ।
এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।