আরমান হেকিম
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:২৮ এএম
প্রবা ফটো
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের চেয়ে ২৩ শতাংশ বড় ভারতের বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল। সেটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়েছে কাজ, ব্যয় বাড়েনি এক টাকাও ।
অথচ কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরের দুই বছর আগে বাংলাদেশে নেওয়া থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে দফায় দফায় ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। লুটপাট করতে সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি করা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে সিলেটের পাথরকে ইতালি থেকে আমদানি দেখিয়ে বিল নেওয়া হয়। টাইলসের মান দেখতে কর্মকর্তাদের বিদেশে আনন্দ ভ্রমণ, পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে ৫৪ লাখ টাকার কাজ ১২ কোটিতে করিয়ে নেওয়াসহ এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকল্পটিতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করেছে সংস্থাটি।
থার্ড টার্মিনালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের মালিক সংগঠন অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একটি সমান্তরাল রানওয়েসহ থার্ড টার্মিনাল প্রজেক্টে সাত হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় কীভাবে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রানওয়ে বাদ দিয়েই ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে?’
ঢাকার থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে একই সময়ে কাজ শুরু হওয়া বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২০২২ সালেই চালু হয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ কোনো রকম ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই ওই বিমানবন্দর তৈরিতে পাঁচ হাজার কোটি রুপি খরচ হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। ওই বিমানবন্দরটি আয়তনে ঢাকার থার্ড টার্মিনালের চেয়ে ২৩ শতাংশ বড়। তারা পারলে আমরা কেন পারলাম না?’
তিনি বলেন, “এত খরচের পরও সেখানে (টার্মিনালে) ‘নিম্নমানের অচেনা ব্র্যান্ডের যন্ত্রপাতি’ বসানো হয়েছে। এত অনিয়মের মধ্যেও ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্মাণ শেষ হওয়ার অনেক আগেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি আর নির্বাচনের মাঠে ফায়দা লোটার জন্য বিগত সরকার থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন করে।”
৭ হাজার কোটির প্রকল্প ঠেকেছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটিতে
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির প্রস্তাবিত মেয়াদকাল শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে। এটি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয় ছিল সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী আনা হয়। এ সময় এক লাফে প্রকল্পের ব্যয় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত কাজের ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহানের সভাপতিত্বে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা সূত্র জানায়, এখনও আট ধরনের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ বর্তমানে প্রকল্পে স্থাপিত ইক্যুইপমেন্ট, সিস্টেমগুলোর টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে। তবে কাস্টমসের স্ল্যানিং মেশিন সংস্থাপন কাজ বাকি রয়েছে। বহুতল কারপার্কিং অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ের সাউথ ও নর্থ উভয় অংশের কাজ শেষে বর্তমানে অপারেশনে (ব্যবহার) রয়েছে। সাউথ অংশের কানেকটিং কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই ট্যাক্সিওয়েগুলো বিমানবন্দরে অপারেশনে সংযুক্ত হবে। বর্তমানে এপ্রোন মার্কিং কাজ চলমান রয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো ও ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের ফিনিশিং কাজ চলছে। টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলছে। তা ছাড়া ইক্যুইপমেন্টের টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে।
পিএসসি সভায় বলা হয়, বিল্ডিং নির্মাণ অংশের বেজমেন্ট এরিয়া, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে স্থাপিত ইক্যুইপমেন্ট, সিস্টেমগুলোর টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে। তবে কাস্টমসের স্ল্যানিং মেশিন সংস্থাপন কাজ বাকি রয়েছে। বহুতল কার পার্কিং অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। কার্ব-সাইড ও এলিভেটেড ড্রাইভওয়ে অংশের গার্ডার স্থাপন, ডেক-স্ক্যাব ঢালাই ও উত্তর প্রান্তের র্যাম্প নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ প্রান্তের র্যাম্পের কাজ চলছে। টানেল অংশের সকল কাজ শেষ হয়েছে। হাই-স্পিড ট্যাক্সিওয়ের সাউথ ও নর্থ উভয় অংশের কাজ শেষে বর্তমানে অপারেশনে রয়েছে। সাউথ অংশের কানেকটিং কাজ শেষ রয়েছে। শিগগিরই ট্যাক্সিওয়েগুলো বিমানবন্দরে অপারেশনে সংযুক্ত হবে। মূল এপ্রোন অংশে কনক্রিট (এলএমসি ও পিসিসি) কাজ ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এপ্রোন অংশের আন্ডারগ্রাউন্ড ফুয়েল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এপ্রোন মার্কিং কাজ চলমান রয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো ও ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স অংশের ফিনিশিং কাজ চলছে। কার্গো হ্যান্ডলিং সিস্টেম স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলছে। ইউটিলিটি বিল্ডিংস অংশের ফিনিশিং কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ইক্যুইপমেন্টের টেস্টিং ও কমিশনিংসহ সাইট ট্রেনিং চলমান রয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সভায় বলেন, ‘প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপির ওপর মন্ত্রণালয় থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তার জবাব দ্রুত পাঠানো হবে। এ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপারেশন কাজ চালু করা। এর মধ্যে টিএসআর (ট্রানজেকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টিএসআর অনুমোদন হলেই পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রজেক্ট ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম চূড়ান্ত হয়েছে।
কেম্পেগৌড়া ও থার্ড টার্মিনালের তুলনামূলক চিত্র
শাহজালাল তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। আর কেম্পেগৌড়া দ্বিতীয় টার্মিনালের আয়তন প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৫ বর্গমিটার। বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রাথমিকভাবে ২ কোটি ৫০ লাখ, যা পরবর্তীতে ৩ কোটি ৫০ লাখে উন্নীত করা যাবে।
শাহজালাল তৃতীয় টার্মিনালের ইমিগ্রেশন কাউন্টার ডিপার্চার ইমিগ্রেশনে ৬৬টি কাউন্টার, যার মধ্যে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য। ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট। প্রায় ১ হাজার ২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। কার্গো সুবিধা নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন ৬৩ হাজার বর্গমিটার, যা দেশের রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে। মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগের জন্য ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু।
কেম্পেগৌড়া দ্বিতীয় টার্মিনালের ডিজাইন ‘গার্ডেন টার্মিনাল’ নামে পরিচিত, যা প্রাকৃতিক উপাদান ও সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নির্মিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও স্থাপত্যশৈলী, আধুনিক চেক-ইন কাউন্টার, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশস্ত লাউঞ্জ এবং বিভিন্ন রিটেইল ও ডাইনিং অপশন।
শাহজালালে ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা এবং কেম্পেগৌড়ার ব্যয় মাত্র ৫ হাজার রুপি। টাকার হিসাবে সাত হাজার। কেম্পেগৌড়া ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হয়। আর ২০১৬ সালে প্রাথমিক কাজ শুরু হলেও শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কয়েক দফা মেয়াদ ও ব্যয় বাড়লেও কেম্পেগৌড়া নির্ধারিত ব্যয় ও মেয়াদেই শেষ হয়েছে।
৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৭ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা করা; বিভিন্ন সরঞ্জাম স্থানীয়ভাবে কিনে বিদেশ থেকে কেনা দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং মাটি পরীক্ষায় অনিয়ম ও নকশা পরিবর্তন করে ৯০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া প্রকল্পের তিনটি বড় কাজ অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে কমিশন বাণিজ্য, দরপত্রে ইউরোপীয় মানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের নাম বলে চীন ও কোরিয়ার নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামাদি সংযোজন, সিলিংয়ের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য অযৌক্তিক কাজ করে ১২ কোটি টাকা অপচয়সহ সিন্ডিকেট করে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর মদদে দুর্নীতির ইজারায় প্রকল্প পরিচালক
সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও বেবিচকসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মদদে যেন দুর্নীতির ইজারা নিয়েছিলেন সাবেক প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম।
বেবিচকের প্রাথমিক তদন্তসূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুর দিকে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক নিম্নমানের সরঞ্জাম ও পণ্য কেনা হয়েছিল। এসব পণ্য বেবিচক যাচাই করার পর অধিকাংশই নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়ায় সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানো হয়। প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদারদের ম্যানেজ করে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আরও কিছু মানহীন বৈদ্যুতিক পণ্য আনান, যা যাচাই-বাছাই করার পর ফেরত পাঠানো হয়।
এ ছাড়া, প্রকল্পের তিনটি বড় কাজ নির্ধারিত ঠিকাদারের পরিবর্তে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে। একদিকে, জাপানি ঠিকাদারকে পাশ কাটিয়ে প্রকল্প পরিচালক তার পছন্দের কয়েকটি ঠিকাদারের মাধ্যমে বেশ কিছু অতিরিক্ত কাজ করান, যার মধ্যে একটি সাধারণ ব্রিজ নির্মাণের খরচ ছিল ৫৪ লাখ টাকা, কিন্তু প্রকল্প পরিচালক পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে ১২ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেন।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের জন্য পাথর ও মার্বেল সিলেট থেকে কেনা হয়, তবে এসব পাথর ইতালি থেকে ক্রয় দেখিয়ে প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে ইনস্পেকশন করেন। তেমনি ১ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফুট টাইলসের মান যাচাই করতে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগও রয়েছে প্রকল্প পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের সাড়ে ৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর নকশা পরিবর্তন করা হয় এবং নতুন নকশায় প্রায় ৭১১ কোটি থেকে ৯০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্পের মূল নকশায় টার্মিনাল ভবনের পাইলিং করার কথা ছিল আধুনিক প্রযুক্তির স্টিল স্ক্রুয়েড পাইল (এসএসপি) দিয়ে, কিন্তু নকশা পরিবর্তন করে পুরোনো পদ্ধতি বোরড পাইলিং করা হয়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সাশ্রয় দেখানো হয়, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে একটি অত্যাধুনিক ভিভিআইপি টার্মিনাল ও ইউ আকৃতির রূপ দেওয়ার জন্য দুটি পিয়ার যুক্ত করার কথা ছিল, যা এখন দাবি করা হচ্ছে অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ৯০০ কোটি টাকা গেল কোথায়?
সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মাকসুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যতটুকু মেধা ছিল তা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছি। একটু সুন্দর ভালো জিনিস হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়ালিও ভালো ছিল। আমি ব্যক্তিগত কোনো অ্যাডভানটেজ নিইনি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বিমানবন্দর সম্প্রসারণের (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করেছে দুদক।
এসব মামলার আসামির তালিকায় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হক এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমানের নামও এসেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু প্রকল্পে বেআইনিভাবে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে যুক্ত করা হয় অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনালকে। প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ১৩ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘থার্ড টার্মিনালের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’