প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৮ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০০ পিএম
শনিবার বিকালে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে জাতির ঘাড়ে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, জুলাই-আগস্টে সাহসী তরুণদের আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে স্মরণ করছি। এ বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত কঠর প্রতিজ্ঞা। যাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাইয়ের ছাত্রদের স্মরণ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একুশে মানে জেগে উঠা, আত্মপরিচয়ের মুখোমুখি হওয়া, একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া। এবারের একুশ আমাদের নতুন দিগন্ত প্রতিষ্ঠিত করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয় প্রথিত দিয়ে গেল। এ প্রত্যয় গভীর অমর একুশের মাধ্যমে আমরা সেই প্রত্যয়ের শপথ নিতে এসেছি। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। যে বন্ধন ছোট বড় যৌক্তিক অযৌক্তি ক্ষণস্থায়ী দীর্ঘস্থায়ী সব দুরত্বের উর্ধে। তাই আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। যেকানো স্বস্তি পাই, সমাধান পাই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একুশ আমাদের মানুষকে তৈরি করে দিয়েছে, আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় নিয়ে গেছে। একুশের টান বয়সের উর্ধ্বে, প্রজন্মের উর্ধ্বে। যা বিস্তৃত হয়েছে তা নয়, গভীরতা অনেক। অভ্যুত্থান তারই প্রমাণ। তরুণ-তরুণী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের দাবিগুলো একে দিয়েছে। রাস্তার দেয়াল ঐতিহাসিক দেয়ালে রুপান্তরিত হয়েছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের বুকের মধ্যে, জাদুঘরে হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বইমেলার আয়োজকরা এই দেয়ালচিত্রগুলো আসা যাওয়া পথে সুন্দভাবে উপস্থাপন করেছে। বাংলা একাডেমির আয়োজন আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লেখক লেখিকারা সারাবছর লেখেন নিজের বইমেলায় হাজির করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করে নিজেদের বই হাজিন করার জন্য। গুণগত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য, আগ্রহ বাড়ানোর জন্য। প্রতি বছর বিষয়বিত্তিক সেরা লেখকের এই আয়োজন করেল লেখকরা এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এবং লেথকরা সেরা প্রকাশ পতে সহায়ক হবে। আমি এই প্রস্তাব করছি। আমরা যদি একুশের ভাষা আন্দোলনকে সাধিকার আন্দোলন হিসেবেও দেখি তাহলে এর গণ্ডি বৃহত্তর হয়ে দাড়ায়। তখন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাহলে কিশোর কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের তাদের সুজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। নতুন উদ্যোক্ত হওয়ার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। শহর ও গ্রামের নারী পুরষকে সাংস্কৃতিক জগত, শিক্ষায় অবদান রেখেছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে পারি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের যারা তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। আমরা একুশের দিনে তাদের স্মরণ করতে চাই। তারা তাদের সন্তানদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমার সব কথা গ্রহণ করতে হবে এমন চিন্তা করি না।
তিনি বলেন, একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা তাদের সন্তান সন্ততির কাছে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিজের বলার সুযোগ যখন পেয়েছি বলে রাখলাম। একুশে বইমেরা ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে এই বইমেলার আয়োজন করছি। জুলাই অ্যুথানে যারা দ্বিতীয়বার বাংলাদেশেকে স্বাধীন করেছে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছি। শিল্প সাহিত্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। সেখানে মনযোগ দিতে হবে। বাংলা একাডেমি ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ এবং এক বছর মেয়াদী দশটি গবেষণা ভিত্তিক কাজের প্রস্তাবনা নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অতীত নিয়ে গবেষণা করা, আর আমদের সামনে যে বর্তমান অতীত হয়ে গেছে সেটাও স্পর্শ করতে পারাটাও একাডেমির কাজ। আমাদের নতুন চিন্তা যারা উস্কে দেয় তাদের সঙ্গে বাংলা একাডেমির যোগাযোগ সীমীত। অনেক কম বললেই চলে। সার্বিক সংস্কার প্রয়োজন। লেখক গবেষক এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার সমন্বয়ে একটা সংস্কার কমিটি গঠন করব। এর সঙ্গে পুরোনো চিন্তা যেমন যোগ হবে। এর সঙ্গে নতুন চিন্তার সংযোগ তৈরি হবে। এই ব্রিজটা করতে পারলে একাডেমি একটা চলমান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এটাকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান অভ্যুথানে শহীদরা মানুষের মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে যে মুক্তি বার্তা ঘোষিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে তার পরিণতি রচিত হয়, চব্বিশের গণঅভ্যুথান তার মাইলফলক। এবারের মেলা হতে যাচ্ছে এই বড় সুযোগের পটভূমিতে। বইমেলাকে গণমানুষের আকাঙ্খার সঙ্গে অন্তভূক্তিমূলক করতে চেয়েছি। আমরা এবার অন্তর্ভূক্তিমূলক করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদের চাওয়া বাস্তবায়ন হবে। লেখক শিল্পী বুদ্ধিজীবীরা বাংলা একাডেমিকে যেভাবে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখেন তা খুবই ইতিবাচক।
এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। বিগত এক দশকের মতো এবারও বইমেলা হচ্ছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ নিয়ে। এবারের মেলায় থাকছে জুলাই চত্বরও। এবারের মেলায় বাড়ানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। মেলায় অংশ নিচ্ছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৩৫।
এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নের ৩৬টিই থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ১টি। মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে তবে আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির পথ এবার কিছুটা সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। মেলার নিরাপত্তা নিয়ে ২৪ ঘণ্টা সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।