প্রবা প্রতিবেদক ও শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২৬ এএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৭ এএম
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকা ও শেরপুরে পৃথক অভিযানে ১৯ হাজার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিনামূল্যের পাঠ্যবই কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টাকালে আটক করা হয়েছে তিনজনকে।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার থেকে দুই ট্রাক বোঝাই প্রায় ১০ হাজার পাঠ্যবইসহ খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুদের সঙ্গে জড়িত চক্রের দুজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বুধবার বিকালে বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে এসব বই জব্দ করা হয়। অভিযানকালে গ্রেপ্তার হওয়া সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল ও দেলোয়ার হোসেন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি চক্র পাঠ্যবই কালোবাজারিতে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ডিবি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই কালেবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দুটি ট্রাক বোঝাই বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই জব্দ করা হয়। জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে অবগত করা হবে। আদালত নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী বইগুলো এনসিটিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
নাসিরুল ইসলাম জানান, আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে তারা বিনামূল্যের বই মজুদ করে কালোবাজারে বিক্রি করে আসছিলেন। শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাতে বিলম্ব করার প্রচেষ্টাও ছিল তাদের।
বছরের প্রথম দিনে স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন সংকটের কারণে সেটি এবার হয়ে ওঠেনি। আর এই ফাঁকে অসাধু চক্র বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল বলেন, ‘বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের কাছ থেকে একটি চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর সেসব বইয়ের বড় একটি অংশ তারা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবার ১১৬টি প্রেসে পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি প্রেস এ জন্য সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। ছাপাখানাগুলোতে অতিরিক্ত বই ছাপানোর তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শেরপুরে জব্দ ৯ হাজার বই, আটক ১
সদর উপজেলার শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক সড়কের কুসুমহাটি বাজার এলাকায় গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অভিযান চালায় থানা পুলিশ। শেরপুর জেলা কার্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণের পাঠ্যবই পাচারের তথ্য পেয়ে ওই অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে একটি ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো ড-১১-৮৩৯২) বহনরত অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণির ৯ হাজার পাঠ্যবই জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে মাইদুল হোসেন (৩৫) নামে এক বই পাচারকারীকে আটক করে পুলিশ। তিনি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কেরুয়ারচর গ্রামের জনৈক হারেজ আলীর ছেলে।
জব্দ করা ট্রাকের চালক সজল জানান, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বাজার এলাকার সংঘবদ্ধ পাঠ্যবই পাচারকারী দলের সদস্যরা তার ট্রাকটি ঢাকায় বই নেওয়ার জন্য ভাড়া নেয়। কিন্তু তারা চালানপত্র না দেওয়ায় সন্দেহ হলে তিনি স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাকে জানান। পরে সদর থানা পুলিশ বইগুলো জব্দ এবং পাচারকারী দলের এক সদস্যকে আটক করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবদুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’