প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩০ পিএম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩১ পিএম
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সাক্ষাৎ। প্রবা ফটো
যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
সাথে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সাক্ষাৎকালে
তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সকে স্বাগত জানান।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
মানবিক সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই নেতৃত্বের ভূমিকায়
রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করেছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে
আরও বেশি করে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান জানাই।’
জবাবে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে বৃহত্তম দাতা। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা
ইউএস-এইড বাংলাদেশের স্থানীয় এনজিওদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করেছে এবং
এটি চলমান রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বড় অংশীদার। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার
জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত
রয়েছে। তাছাড়া পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামর্থ্য বৃদ্ধিতে তারা
উন্নত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রদান করে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে।’
উপদেষ্টা মানবাধিকার ইস্যুতে পুলিশ এবং মানব পাচার ইস্যুতে বিজিবি
ও কোস্টগার্ডকে আরও বেশি হারে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও অনুরোধ করেন।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে
উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের আগের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অনুমতি দিচ্ছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিবো। তবে কর্মকর্তারা যেন প্রশিক্ষণ
শেষে দেশে ফিরে এসে স্ব স্ব ডেস্কে কর্মরত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে এটি আরও
ফলপ্রসূ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দু'দেশের
মধ্যে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা বিদ্যমান। তিনি এ সময় সন্ত্রাস
দমন ইস্যুতে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ আপডেটের ওপর গুরুত্বারোপ
করেন।’
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের প্রশ্নের জবাবে
উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক
রয়েছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে ভারতের দিল্লিতে দু'দেশের মধ্যে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক
পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
বলেন, ‘বাংলাদেশে
কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতিত হচ্ছে না। এটা ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। সংখ্যালঘু শব্দটা
আমরা ব্যবহার করতে চাই না। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক ও সবার সমান অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘুদের
বিষয়ে ৫ আগস্টের পর যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেটি মূলত রাজনৈতিক কারণে, ধর্মীয়
কারণে নয়।’
বৈঠকে দু'দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যু, সন্ত্রাস দমন, রোহিঙ্গা সমস্যা,
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগিতা, পুলিশ সংস্কার কমিশন, সীমান্ত
পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু ইস্যু, কৃষি খাতে সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন
বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রেসিডেন্ট লিগ্যাল অ্যাডভাইজার রাহুল
কেইল, ল' এনফোর্সমেন্ট অ্যাটাচে মাইকেল ডব্লিও হিন্জ, পলিটিক্যাল মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স
অফিসার জো পোপ, অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিয়নাল সিকিউরিটি অফিসার স্টিফেন কোভাসসহ স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।