জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহতে দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন৷ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পুলিশ সংস্কার কমিশনের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন এ সুপারিশ করেছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি/ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপারের নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে। এছাড়া মামলা ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআর বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, ভুয়া/ গায়েবি মামলায় অনিবাসী/ মৃত/ নিরাপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রদান প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে। অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।  বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

সুপারিশে বলা হয়েছে,  আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা বা তাদের প্ররোচনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রধান নিজেই যাতে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়েও একটি মানবাধিকার সেল কার্যকর থাকার বিষয়ে কমিশন সুপরিশ করছে। সংবিধান, বিভিন্ন আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পুলিশের অমান্যের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার পাওয়ার জন্য নতুন হেল্প লাইন চালু করা কিংবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯) সেবার মধ্যে এ ধরণের অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষার জন্য একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা উচিত, যা জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং জনবান্ধব পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে র‍্যাবের (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) অতীত কার্যক্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।