× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিডিআর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্ত দাবি

দিনভর কর্মসূচি, রাতে শহীদ মিনারে অবস্থান

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৫৭ এএম

আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৭ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

বুধবার সকালে এ দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও কারাগারে থাকা সদস্যদের স্বজনরা। পরে তারা শাহবাগে অবস্থান নেন এবং বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। দাবি আদায়ে রাতে শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আজ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন তারা। 

দিনভর শাহবাগ ও শহীদ মিনারে কর্মসূচি শেষে বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে স্মারকলিপি দিতে যান চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের স্বজনরা। এ সময় তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরাও ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আজ (গতকাল) রাতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। যদি ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না দেখি, আগামীকাল (আজ) আবার শাহবাগ ব্লকেড করা হবে। একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

বিডিআর ৪৬ ব্যাচের সদস্য কেএ রাজ্জাক বলেন, আমরা রাতেও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। ন্যায়বিচারের আভাসের জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে অপেক্ষা করব। যদি ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না পাই, তাহলে শাহবাগ ব্লকেড করব।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও পুনঃতদন্ত, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এসব দাবিতে গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন নানা প্রান্ত থেকে আসা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের স্বজনরা। তারা সেখানে মানববন্ধন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ জানানো হয় বিগত সরকারের নানা সিদ্ধান্তের। 

বিডিআর পরিবারের সদস্যরা বলেন, তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নীলনকশার অংশ হিসেবেই ২০০৯ সালে পরীক্ষিত সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয় বিডিআর সদস্যদের। সমাবেশ থেকে বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিস্ফোরক মামলায় সবার জামিনের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। তারা বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে সেনাহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখেন তারা।

পরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে তার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। তবে শাহবাগ পর্যন্ত গেলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে তারা শাহবাগ থানা ও জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তাদের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান। বাকিরা শাহবাগে ছিলেন। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে আবারও শহীদ মিনারে চলে যান তারা।

গতকাল রাত ৮টায় শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, আন্দোলনরতরা অবস্থান নেওয়ায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সন্ধ্যার দিকে তারা চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করছেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলেছেন। তারা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আটকে দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ‘বিদ্রোহের’ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ১৫ বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।

কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে চলবে বিচার

বকশীবাজার অস্থায়ী আদালত থেকে বিডিআর মামলা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে বিচার চলবে। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে অস্থায়ী আদালত বানিয়ে বিচার পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় অস্থায়ী আদালত ভবনটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের বাধার কারণে সেখানে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আসামিদের নিয়ে যাওয়া-আসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হচ্ছে। আসামিদের কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হচ্ছে বিধায় ওই কারাগারে নির্মিত অস্থায়ী আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করা গেলে আসামিদের আনা-নেওয়ার অসুবিধা দূর হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা