× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি

আরিফুর রহমান রাব্বী

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৪ এএম

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৫০ এএম

অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় গত ২৭ ডিসেম্বর বেপরোয়া এক বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের চারজনসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন পাবনার সাঁথিয়ায় ট্রাকচাপায় মারা যান চার দিনমজুর। এই সড়ক দুর্ঘটনাতেই গত শনি আর রবিবার দুই দিনে দেশের সাত জেলায় ছাত্র-শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এত গেল বছর শেষের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। বিদায়ি ২০২৪ সাল অর্থাৎ বছরজুড়েই ছিল এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা আর প্রাণহানির চিত্র।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে সারা দেশে ৬ হাজার ৪৭৪টি দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৯৯ জন মারা গেছে, আহত হয় ১১ হাজারের বেশি। ২০২৩ সালে পুরো ১২ মাসে ৬ হাজার ৯১১টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫২৪। সব মিলিয়ে এই বিদায়ি বছরে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এসব দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ সড়ক ব্যবস্থায় বিআরটিএ এবং পুলিশের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও কুয়াশা। 

গত অক্টোবর মাসে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, সড়ক সেক্টরে বিগত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, চরম অব্যবস্থাপনা, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে দেশে ৬০ হাজার ৯৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত ও ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বছরের পর বছর এই খাতে বেপরোয়া বাস চালানো, চালকের অতিরিক্ত ট্রিপ, রুট মেনে না চলা, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো নামানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি আর তদারকির অভাব, অদক্ষতাসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা বিরাজমান থাকায় একের পর এক এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রচলিত আইন বহাল হলেও তার শক্ত প্রয়োগ না থাকায় বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে না। 

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট থেকে সংগ্রহ করা সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যের সূত্র ধরে জানায়, গত ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, তারা এখনও ডিসেম্বর মাসের তথ্য একত্রিত করেননি। তথ্য একত্রিত করলে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হবে। বাংলাদেশে যে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে এটাকে কাঠামোগত হত্যা বলা যায়। কারণ কেউ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অযোগ্য বা নষ্ট, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, চালকের অদক্ষতা, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সঠিকভাবে আইন পালনে মালিক-চালকদের বাধ্য করতে না পারাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। 

সম্প্রতি ঢাকা-মাওয়া সড়কে দুর্ঘটনার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চালক ছিলেন নেশাখোর এবং ওই বাসের ফিটনেস ছিল না। এগুলো দেখার দায়িত্ব কার? আমি মনে করি, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। এখানে যদি বাসের চালক ও মালিকের বিচার হয়, তবে সেখানে পুলিশ বা যানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না? ফিটনেস গাড়ি কীভাবে রাস্তায় চলাচল করে?’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে দীর্ঘদিন ট্রাফিক পুলিশ অনুপস্থিত ছিল। পরে যখন তারা রাস্তায় নামে, তখনও একটা ঢিলে-ঢালা ভাবছিল। এ ছাড়া পুলিশের ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় মানুষ আইন মানছে না। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, ছোট যানবাহনগুলো অবাধে মহাসড়কে চলছে। অনেকে আবার উল্টো পথেও গাড়ি চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে আইন প্রয়োগে বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণেই এ বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ৯ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বাহন সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।’

রাজধানীর সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছিল শিক্ষার্থীরাও। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছিল, পরে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা ছিল। এ কাজের জন্য তাদের সম্মানী দেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন। এরপর কিছু দিন সড়কে শিক্ষার্থীদের দেখা গেলেও এখন তাদের খুব একটা দেখা যায় না। 

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘সড়কে অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। চালকদের একটি বড় অংশ ট্রাফিক আইন মানতে চান না। হকাররা শুধু ফুটপাত নয়, অনেক স্থানে রাস্তাও দখল করে রেখেছে। এরূপ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। তবে এ থেকে উত্তরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ 

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। তারা নিয়মিত টহলসহ ওভারস্পিডিং এবং আইন অমান্যকারীদের জরিমানা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও দুর্ঘটনা কমছে না। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ 

সাইদুর রহমান ও মোজাম্মেল হক তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে কিছু সুপারিশ করেছেন। 

সেগুলো হলো- সড়কে বাজেট বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গঠিত সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট শক্তিশালী করা; ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা। দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং অঙ্কন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। গণপরিবহন চালকদের যুগোপযোগী পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা