× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চলতি বছর ধর্ষণ শেষে হত্যা ও শিশু খুনের ঘটনা বেশি

পারভেজ খান

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৪২ এএম

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:০৪ এএম

চলতি বছর ধর্ষণ শেষে হত্যা ও শিশু খুনের ঘটনা বেশি

বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালজুড়ে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাৎকার, অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ শিশুর প্রতি নানা সহিংস ঘটনা অব্যাহত ছিল। গত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে নারী-শিশু নির্যাতন আর ধর্ষণের ঘটনা তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও ধর্ষণ শেষে হত্যা আর শিশু খুনের ঘটনা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। এ সময়কালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, সহিংসতার কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় ৪৮২ নারী ও শিশু। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪০৩। শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও এ বছর বেশি সংঘটিত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ ও পারিবারিক সহিংসতায় ৫০২ শিশু নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৫৬ জন। বিদায়ি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক অস্থিরতার কারণে সারা দেশে পারিবারিক বিরোধ, পারিবারিক সহিংসতাও মারাত্মক আকার ধারণ করে। এতে অনেক নারী শিশু নির্যাতন আর খুনোখুনির ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সদর দপ্তর, হাসপাতাল এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চলতি ২০২৪ সালের শুরু থেকে গত রবিবার ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪০৭ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০৪ জন গণধর্ষণের শিকার। ধর্ষণ শেষে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৪৭ জন। ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুর সংখ্যা ২৫৪। ৩৯ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ৪২ কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু রয়েছে ১১ জন।

একই সূত্র মতে, ২০২৩ সালে সারা দেশে এক হাজার ৫৭৪ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৯ জনকে। ২০২২ সালে এক হাজার ৯৯৬ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের সময় এবং পরে হত্যা করা হয়েছে ৪৮ জনকে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামাজিক অস্থিরতা আর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আইনকে নিজের মতো করে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা চলতি বছরে বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্য সব অপরাধের পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের হারও বেড়েছে। জুলাই আগস্ট মাসে সাধারণ মানুষ এসব ঘটনা নিয়ে থানা পুলিশ বা আদালতে পা রাখবার মতো সুযোগ পায়নি। মামলা কম হওয়ার এটিও একটি কারণ। পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের মামলার প্রায় সিংহভাগই পুলিশ বা আদালত পর্যন্ত যায় না। সামাজিকভাবে লজ্জার কারণ, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি অনীহা এবং প্রতিপক্ষের ভয়েও নির্যাতনের শিকারের একটি বড় অংশ কোথাও অভিযোগ করে না। এর কারণে প্রকৃত অপরাধ বা ঘটনার চাইতে মামলার সংখ্যা কম হয়। ফলে মামলার সংখ্যা বা পত্রিকার সংবাদ দেখে সঠিক পরিসংখ্যান বের করা সম্ভব নয়।

তারা আরও মনে করেন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে বা এ ধরনের অপরাধ রোধে আইন প্রয়োগে আরও বেশি কঠোরতা দেখাতে হবে। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত, মেডিকেল পরীক্ষা এবং আদালতে বিচারকাজে দীর্ঘ সময় নেওয়া ও ভিকটিমের জেরার জটিলতাও এক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। পাশাপাশি ধর্ষণকে শুধু একটি ভয়ংকর মাত্রার অপরাধ নয়, সামাজিক ব্যাধি হিসেবেও দেখতে হবে। ফলে সামাজিক সচেতনতা এবং প্রতিবন্ধকতাও এ ধরনের জঘন্য অপরাধপ্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয় কম। অধিকাংশই বিচার কার্যালয় থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। একটি মহল মনে করে, অধিকাংশ ধর্ষণের মামলার অভিযোগ থাকে মিথ্যা। ফলে আদালতে সেটা প্রমাণ হয় না। আবার আরেকটি মহল মনে করে, অভিযোগ মিথ্যা নয়। আইনের নানান জটিলতার কারণেই আসামিরা ছাড় পেয়ে থাকে এবং এর কারণেই ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবির বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত আমরা শিশুদের নিয়ে খুব বেশি পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। জরুরি ভিত্তিতে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করি।

মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ দুই ভাগের বেশি শাস্তি হয় না। শাস্তির হার এত কম দেখে কেউ কেউ বলেন অধিকাংশ ধর্ষণ মামলাই মিথ্যা। কিন্তু এ ভাষ্য ঠিক নয়। আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হলেই ধর্ষণের ঘটনা মিথ্যা হয়ে যায় না। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার পদ্ধতি, মামলার তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ, আদালতে বাদী বা ভিকটিমকে জেরাসহ আরও নানান কারণে আসামিরা বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগে ছাড়া পেয়ে যান।

আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় মেডিকেল প্রতিবেদনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আদালত। কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারী ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য বা ঘটনা পরম্পরাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে অনেক আসামিই ছাড়া পেয়ে যান।

এ বিষয়ে এলিনা খান বলেন, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। বিচারকরা এখন আরও বেশি সতর্ক হয়ে গেছেন। যেহেতু মৃত্যুদণ্ডের বিষয়, তাই তারা কোনো ধরনের বেনিফিট অব ডাউট পেলেই খালাস দিয়ে দিচ্ছেন।

এলিনা খানের মতে, শাস্তির চেয়ে যেটা আগে বেশি প্রয়োজন তা হলো সঠিকভাবে মামলা দায়ের এবং মামলার তদন্ত। এই বিষয়গুলো ঠিকভাবে করা। কিন্তু বাস্তবতায় মনে হয়, আমাদের দেশে সবকিছুই যেন ধর্ষকের পক্ষে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার সাঈদুল মুনিম পিয়াস বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারায় বলা আছে, যখন কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের দায়ে বিচারের সম্মুখীন হন তখন ভিকটিম দুশ্চরিত্রা কি না, তা সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। মূলত ধর্ষণের মামলায় ভিকটিমের সম্মতি ছিল তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং অপরাধটিকে ন্যায়সংগত করার জন্য এই উপধারাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাক্ষ্য আইনে বলবৎ এই ধারায় একজন ধর্ষিত নারীকে উন্মুক্ত আদালতে চরিত্রহীন প্রমাণ করার বা তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, যা যেকোনো নারীর মর্যাদার পক্ষে চরম অবমাননাকর। আমাদের সাক্ষ্য আইনে উল্লিখিত ধারাগুলোর সংশোধন ও ১৫৫ ধারার (৪) উপধারাটি দ্রুত বাতিল করা প্রয়োজন। যেটা আমাদের প্রতিবেশী ভারতে করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ধর্ষণ-সংক্রান্ত তদন্ত ও বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। আর সার্বিক বিবেচনা করলে এতে করে ধর্ষকদের ওপরও একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে এবং যেটা ধর্ষণের হার কমিয়ে আনতে পারে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তাদের এক জরিপে জানিয়েছে, এমন অনেক মামলা রয়েছে, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টা পর হতে ১৫ দিনের মধ্যেই অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যান। এরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। আবার এমনও দেখা গেছে, পনের-বিশ বছর আগে চার্জশিট হয়েছে এমন অনেক মামলাও রয়েছে যেগুলোর এখনও বিচার হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার সদিচ্ছার অভাব এসবের জন্য দায়ী। অনেক মামলার এখনও মেডিকেল টেস্ট হতে কালক্ষেপণ করা হয়। বেশিরভাগ মামলায় সাক্ষী হাজির না হওয়াতে তারিখ পিছিয়ে যায়। ফলে বাদী বা অভিভাবকরা হতাশ হয়ে আর কোর্টে যেতে চান না। আবার দরিদ্র অভিভাবকরা আর্থিক অসুবিধার জন্য মামলা চালাতে অনীহা প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা