প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৩৪ পিএম
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস-উর-রহমান। তিনি বলেন, আশা করছি এই আলোচনার পরে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ থাকবে না।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
এর আগে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর-রহমানের কাছে লিখিত দাবি-দাওয়া পেশ করেন তারা।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে অনেকের মতামত আছে, তারা মতামত দিচ্ছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন লিখিতভাবে তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছে, আমরা এটা কমিশনে জমা দেব। কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলোচনায় বসা হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই আলোচনা হবে। এটার পর বিভিন্ন ক্যাডারের আমরা যারা সরকারি চাকরি করি তাদের কারো মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না।’
মোখলেস-উর-রহমান বলেন, ‘এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংস্কার কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া। এটা যেহেতু একটা পর্যায়ে এসেছে, এক্ষেত্রে আমাদের যারা স্টেকহোল্ডার আছে তাদের মতামত আছে তারা দিচ্ছেন। অনেকে অনলাইনে দিচ্ছেন, কেউ লিখিত দিচ্ছেন, আজকে প্রশাসন ক্যাডাররা লিখিত দিয়েছেন। যেটা আমরা সংস্কার কমিশনে দেব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়েকটা মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। মূল কথা হলো এর আগে ২৩টা কমিশন হয়েছে। এটা ২৪তম কমিশন। এটা শুধু জনপ্রশাসন কমিশন না; এরকম আরও ৬টা কমিশন রয়েছে। সব কমিশনই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এই কমিশনে একটা চূড়ান্ত পরামর্শ বা সাজেশন দেওয়ার আগে বাসার সভাপতি ও জেলা প্রশাসন ঢাকাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা মিলে একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আমাদের যে সকল কর্মকর্তা আছে এবং আমাদের সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বসে একটা মতামত কমিশনকে দেওয়া হবে।’
কবে নাগাদ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে তো সপ্তাহের শুরু। আশা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে করব। এতে কমিশনসহ সকলের সময় নিতে হবে। এটার পর বিভিন্ন ক্যাডারের আমরা যারা সরকারি চাকরি করি তাদের কারো মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না।’
মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘আমাদের চাকরির বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই স্থানে আসছে। আইসিএস থেকে সিএসপি থেকে ডিসিএস এখন একটা পর্যায়ে এসেছে। যাতে এই জায়গায় কোনো এনামেলি যদি থাকে কোর্টের কিছু জাজমেন্ট আছে সেগুলো যেন ভায়োলেশন না হয়। সবাই যাতে বেনিফিট পায়, তবে সবাইকে তো আর শতভাগ করা যাবে না। কিন্তু দূরত্ব কমিয়ে আনা হবে। তবে এখন যে কথাগুলো বলা হচ্ছে এগুলো এখনও কোনো আকার নেয়নি। সেটা নেওয়ার আগে আমরা কমিশনের সঙ্গে ক্লোজডোর আলোচনায় বসব। এটা আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
বাসা ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে বসবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে অনেক আগেই বসা হয়েছে। সকলের সঙ্গেই বসা হয়েছে। বাসার সাথেই শুধু বসা হয়নি। সেই বসার ক্ষেত্র বা সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
১৭ ডিসেম্বর সংস্কার কমিশনের বক্তব্যের পর কী আসলে বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা বলব যে এখানে অনেক বিষয়ে আলোচনায় এসেছে। আমরা যেহেতু সবাই মিলে এজেন্ডা ঠিক করব। এগুলো পাবলিক বিষয় যখন যেটা হবে আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সার্ভিস দেওয়া।’
ভুল বোঝাবুঝির অবসান কীভাবে হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আপনাদের ৪০টি মিডিয়া রয়েছে আমি একটা কথা বলেছি। তবে ৪০টি মিডিয়া যার যে-রকম চিন্তা-চেতনা সে সেরকম করে প্রচার করলো। কিন্তু বিষয় একটাই। আসলে ভুল বোঝাবুঝি এটাই।’
সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোডাউন দিতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘বাসাতো হলো একটা অ্যাসোসিয়েশন। তারা আজকে এখানে এসেছে তারা হয়তো দল বেঁধে এসেছেন। আমার মনে হয় এ বিষয়ে কীভাবে পজিটিভলি এগোনো যায় তার একটা রোল। আমরা বিভাগে, জেলা, উপজেলায়, ইউনিয়নে গিয়েছি। এখন সেন্ট্রালে কমিশনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর মধ্যে যে কেউ কমিশনকে তথ্য ও সুপারিশ দিতে পারেন। আজকে আমরা কিছু সুপারিশ পেলাম। সরকারকে স্থিতিশীল রেখে জনগণের স্বার্থে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাতে এগোনো যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এ বিষয়ে বাসার সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লার বলেন, ‘সচিবালয়ে জনপ্রশাসন বলে আর পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে এই দুই মন্ত্রণালয়ে ৩০০ জন কর্মকর্তা আছেন। তারা কমিশনের সদস্য সচিবের মুখ থেকে একটা কথা শোনার জন্য ১০ মিনিটের জন্য এসেছেন। সেটা তারা আসতেই পারেন। এখানে কোনো অশোভনীয় আচরণ করা হয়নি। আমি বলব- এটা একটি শোভনীয় প্রক্রিয়া। আমরা স্যারের মুখ থেকে কিছু কথা শোনার জন্য আসছি। আমরা যেহেতু কমিশনপ্রধানকে পাচ্ছি না, স্যারকে পেয়েছি। তাই আমরা আমাদের একটা কাগজ হস্তান্তরের জন্য এসেছি। এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।’
আজকে সচিবালয়ে দুই হাজর কর্মকর্তা এসেছেন, বাইরে থেকে কর্মকর্তারা এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে সমন্বয়ক সভা ছিল। সেজন্য জেলা থেকে কমিটির লোকজন এসেছে। সচিবালয়ে সহকারী সচিব পর্যায়ে হিসাব করেন। আমার মনে হয় না যে, ১৫০ জন লোক এসেছে। আমাদের বাসার সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৫১ জন।’
আজকে মিটিংয়ে কি হলো- জানতে চাইলে বাসার সভাপতি বলেন, ‘স্যার যে কথাগুলো বলেছেন সেটাই আমাদের কথা। আপনারা জানেন আমরা কিন্তু কোনো ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে আন্ডারমাইন্ড করছি না। যার যার অবস্থান বা পদ থেকে ওপরে ওঠার যে সুযোগ আছে সেটা অবারিত আছে। সেখানে আমরা কখনো কারো বিরুদ্ধে আচরণ করছি না। একটা রাষ্ট্রকে জনপ্রশাসনকে কোনোভাবে যাতে অস্থিতিশীল করা না হয় সেজন্য আমাদের কর্মকর্তারা এখানে এসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিশন। যে কমিশনের মাধ্যমে মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত। সেই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের যদি ক্যারিয়ার না থাকে তাহলে তাদের মন খারাপ থাকতেই পারে। দীর্ঘদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দেশ স্বাধীনের পর অনেক কমিশন হয়েছে তারা সুপারিশও করেছেন। ২০২৪ সালে এসে এই কমিশনটি কাজ করছে। গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের কিছু কথা মিডিয়াতে আসায় আমরা মনে করছি কিছু তথ্য স্যারদের দেওয়া দরকার। সে কারণেই আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আরও একবার বসার সুযোগ চাই।’