প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৯ এএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৪৯ এএম
‘সাবাস বাংলাদেশ/এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’Ñ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার পঙ্ক্তির মতোই মাথা না নুইয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে খালি পায়ে, লুঙ্গি দিয়ে কাছা মেরে রাইফেল নিয়ে মরণপণ লড়াই করে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানিদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে তারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হয়ে গেলেও বাঙালি মাথা নত করে না।
আজ ১৬ ডিসেম্বর। আজ বাঙালির বীরত্ব ও আত্মদানের মহিমায় পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন, স্বাধীন এক রাষ্ট্রের মাথা উঁচু করে স্থান করে নেওয়ার দিন। এদেশের সকল মানুষের জাতীয় মুক্তির চেতনায় নতুন যাত্রা শুরুর দিন। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে এই জনপদের সাড়ে সাত কোটি মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখর করে তুলে প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার’ মন্ত্রে নতুন রাষ্ট্রে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ প্রতিষ্ঠার।
এদিন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (পরবর্তীকালে যেটির নাম হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অবনত মস্তকে পায়ের কাছে আধুনিক সমরাস্ত্র নামিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে, বাংলাদেশ-ভারতের মিত্র বাহিনীর কাছে গ্লানিময় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।
এর আগে একাত্তরের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কালজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। সেদিন তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান, যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে। ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার এ সবুজসংকেতেই জীবনকে তুচ্ছ করে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের মানুষ। পঁচিশে মার্চের কালরাতে পৃথিবীর নৃশংসতম গণহত্যা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পরও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পারেনি এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের সেই অপ্রতিহত গতি রুখতে। গণহত্যার শিকার লাখ লাখ মৃত মানুষের স্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে তারা বরং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
দ্রুতই গড়ে ওঠে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা। একাত্তরের ১৭ এপ্রিলে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। পাশাপাশি এদিন অনুমোদন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ও সর্বাধিনায়কত্বে, কর্নেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর সেনাপতিত্বে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের লাল পতাকা ওড়ায় বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রত্যাশা
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশকে উত্তরোত্তর বিকশিত করা। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সেই আকাঙ্ক্ষা ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এলেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার পথ ধরে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারেনি কোনো সরকার। গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের নতুন রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিক সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ এদেশের আপামর জনগণ। তারা বলছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন ছিল, তা বারবার ছিনতাই হয়েছে। আমরা আবার বুকের রক্ত দিয়ে আন্দোলন-অভ্যুত্থান করে বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু সেই স্বপ্নও ছিনতাই হয়েছে। তাই এবারের বিজয় ধরে রাখতে হবে। এবার যদি সেই বিজয় ধরে রেখে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার ও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশ আরও অনেকদূর পিছিয়ে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে ব্রিগেড ৭১-এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ হারাতে শুরু করে। যে ধারা এখনও অব্যাহত। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃথা যাবে না। আমরা হতাশ নই। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তখন আমাদের কাছে অস্ত্র নয়, মনোবলই বড় ছিল। আমরা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে গেছি, তবে আবারও আমাদের জায়গায় ফিরে আসব বলে আমার প্রত্যাশা।’
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, ‘আমরা সবসময় জনসাধারণকে অবমূল্যায়ন করি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর মনে হয়েছিল আমরা একটি সুন্দর দেশ পাব। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ চলেছে ২৩ বছর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রত্যাশা ছিল স্বাধীন হলে এদেশে সাম্য, শান্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার আসবে। কিন্তু কোনোটাই এলো না।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে শোষণ করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন কালেও গুম-খুন হয়েছেÑ এটা আমরা বয়স্করা জানলেও নতুন প্রজন্ম জানত না। নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের অনিয়ম, দুর্নীতি, নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। এইবার ব্যর্থ হওয়া যাবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে একটি দুর্নীতিমুক্ত, সাম্যের দেশ গড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ, সমাজ-বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বৈষম্যহীন একটি দেশ স্থাপনের স্বপ্নপূরণ হয়। এই স্বপ্নপূরণের জন্য লাখ লাখ মানুষ প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রকাঠামোয় ক্ষমতার পালাবদলে দেশে কখনও স্থিতিশীল গণতন্ত্র কার্যকর হতে পারেনি। আমরা সামরিক ও একদলীয় শাসন দেখেছি। দেখেছি নির্বাচিত সরকারের মধ্যেও বৈষম্য কতটা জাঁকিয়ে থাকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বুদ্ধিজীবীরা যে পরিকল্পনা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নির্মাণ করেছিলেন এবং জাতিগত চেতনা গড়ে তুলেছিলেন তার বিরুদ্ধেও গেছে কোনো কোনো সরকার। এমনকি সংবিধানে উল্লেখিত অসাম্য-বৈষম্য দূরীকরণের পথ থেকেও সরে গেছে কেউ কেউ। প্রতিবারই জনগণ তাদের উচ্ছেদ করেছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক, ন্যায়বিচারিক এবং সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ও সহিংসতা বেড়েছে, তা অসত্য নয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য আমরা আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স আয়, আর্থিক খাত, জিডিপির দিকে তাকালেই অনুধাবন করতে পারব। দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এবং সম্পদগত জায়গায়ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন এবং কাঙ্ক্ষিত সুখী বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটেনি। বঞ্চনা, দারিদ্র্য, অপরাধ ও জালিয়াতি এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অভাবে সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। শিক্ষা ও চিকিৎসাকে এখন অনেকেই তাদের মৌলিক অধিকার ভাবতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা পূরণ হয়নি। হয়নি বলেই পরবর্তী প্রজন্ম তাদের উত্তরসূরিদের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ আরেকটি গণঅভ্যুত্থান পরিচালনা করে। জুলাই অভ্যুত্থান তাই মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয়েছে। এভাবে জাতির কৃতী ও শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটানোর একটি সুযোগ আবার আমাদের সামনে এসেছে।’
বীরসন্তানদের স্মরণ করবে সর্বস্তরের মানুষ
মুক্তিযুদ্ধের বীরশহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে বিজয়ের এই দিনে আজ সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর অদূরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবে সর্বস্তরের মানুষ। আজ সরকারি ছুটি থাকবে সারা দেশে।
প্রতিবছরের মতো এবারও বিজয় দিবস উদযাপনে রয়েছে দেশজুড়ে নানা আয়োজন। শুধু এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে এবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লের বদলে এবার হবে বিজয় মেলা। গ্রামীণ বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য নিয়ে এই মেলা হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি দেশের সকল সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী
বিষয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, ‘লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশÑ মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, ‘দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’
বিজয় দিবসের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠামালা
আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস উপযাপনের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিবসটিতে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
মাসব্যাপী ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া, দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় চলবে দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি হবে।
বঙ্গভবনে অপরাহ্ণে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায়ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান-উত্তর প্রথম বিজয় দিবসে জাতীয় চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে দুপুর ১২টায় এক বিশেষ কর্মসূচি হবে। এই বিশেষ কর্মসূচিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদদের পাশাপাশি ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করা হবে। এছাড়াও বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং দোয়া করা হবে। আজ বেলা তিনটায় বাংলামোটর থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বিজয় র্যালি করবে নাগরিক কমিটি।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময়কে স্মরণ করে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গেয়ে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে শুরু হবে মহান বিজয়দিবস উপলক্ষে ছায়ানটের উৎসব। পুরো আয়োজনই সরাসরি দেখা যাবে ছায়ানটের ফেসবুক পেজ (facebook.com/chhayanautbd) এবং ইউ টিউব চ্যানেলে (youtube.com/@chhayanautbd)।