প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২৫ পিএম
অনির্বাচিত সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুপারিশের অধিকার আছে কিন্তু সেটি সংশোধন করার বিধিবদ্ধ অধিকার আছে বলে আমার মনে হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিওর সভাপতিত্বে এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, হাফিজুর রহমান কার্জন ও জোবায়দা নাসরীন; দৈনিক সমকালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকার সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালের পাল পুরোহিত অ্যালবার্ট ডি রোজারিও পাল পুরোহিত, কারিতাস ডেভেলপমেন্টের পরিচালক থিও থিল নকরেক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, মহানবী মুহাম্মদ সা. এর বিদায় হজের ভাষণ হচ্ছে মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ দলিল। আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকারের সংজ্ঞাকে প্রাধান্য দেই কিন্তু বিদায় হজের ভাষণকেই সব থেকে বেশি মূল্যায়ন করা দরকার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমরা কী দেশে সাম্য মৈত্রী অর্জন করতে পেরেছি? অথচ স্বাধীনতার পর আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশ মানুষের রাষ্ট্র হবে কিন্তু তা হয়নি। সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করে ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে এরশাদ, ১৫তম সংশোধনীতেও আওয়ামী লীগ তা রেখে দিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে আমরা টিকে থাকতে পারব না।
সংবিধান সংশোধন হবে এটার অর্থ কী বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, অনির্বাচিত সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুপারিশের অধিকার আছে কিন্তু সেটি সংশোধন করার বিধিবদ্ধ অধিকার আছে বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া সংবিধানে সংখ্যালঘু শব্দটি বাদ দিতে হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রাখা সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন এই বুদ্ধিজীবী।
মূলপ্রবন্ধে মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও ক্ষমতায় থাকা কোন রাজনৈতিক দলই দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যবিলোপ নিশ্চিত করতে পারেনি। বাস্তবে সামাজিক বৈষম্য যেমন বেড়েছে তেমনি বিস্তার ঘটেছে সাম্প্রদায়িকতার।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশের নানা এলাকায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ২০১০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০ আগস্টের পরেও এ ধরণের সহিংসতা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে হলেও আজও তা অব্যাহত আছে। দুঃখজনকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও কিছু রাজনৈতিক দল এ ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রলেপ লাগিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। নিপীড়নের ঘটনাকে লঘু করে দেখা বা যথারীতি অতীতের ন্যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করতে গেলে কোন কোন পক্ষ নানা ধরনের ট্যাগ লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মনীন্দ্র নাথ।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুন্ড্ররিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মামলার প্রসঙ্গও আসে লিখিত বক্তব্যে।
মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংবিধান স্বীকৃত আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে না? চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কতটুকু যৌক্তিক সে ব্যাপারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের নানা এলাকায় সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, এমন বাস্তবতায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে কিনা তা বিরাট প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
হাইকোর্টে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর প্রশ্নে রুলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিদ্যমান সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া প্রসঙ্গ তুলেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মনীন্দ্র নাথ বলেন, সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিতে বলা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার সাথে অসামঞ্জ্যপূর্ণ নয় কি?
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা।
জোবায়দা নাসরিন বলেন, দেশে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর সমাধান হয়নি। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি রাষ্ট্র তখন স্বীকার করেছে যখন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আওয়াজ এসেছে। তিনি নারীদের সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে বলেন, কোন হিন্দু নেতারা চায় না মেয়েরা সম্পত্তি পাক। এমনকি আদিবাসী নেতারাও নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চায় না।
তিনি বলেন, ছাত্রদেরকে পুরো মড়লগিরির ক্ষমতা দিয়ে দিলে মগ জাস্টিস হবেই। এবার পুজায় প্রথম দিন থেকে ঢাক বাজানো হয়নি, এটা কিসের লক্ষণ?