প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৪২ পিএম
মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। প্রবা ফটো
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সেই টাকা এখন গুজব ছাড়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিদিনই আছে। ফেসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার কয়েকটি কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে হতাহত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ফেসবুক এনালাইসিস করেন তাহলে দেখবেন, সোমবার সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা যে নিহত হয়েছেন, সেটা কিন্তু বিগত সরকারের দলীয়কর্মীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। মুলত তারাতো যেকোনো ভাবে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চাইবে, উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। সেই ষড়যন্ত্র প্রতিদিনই সরকারের বিরুদ্ধে আছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। দেশে এবং দেশের বাইরে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ছাড়ানোর জন্য।
তিনি বলেন, সেই জায়গায় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বেশি। তারা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারে হলে বাংরাদেশের জনগণ মনে রাখবে। আমাদের এই পরিবর্তন সময়ে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম একটা বড় জায়গা। ষড়যন্ত্র আছে সেই ষড়যন্ত্র আমরা উড়িয়ে দিতে চাই না। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব ও করণীয় সেটা করছি। আমরা আপনাদের সমালোচনা নিচ্ছি ও সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
দেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কি এ রকমই থাকবে নাকি আরও কঠোর অবস্থানে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিস্থিতিতো পরিবর্তন হবে। আমরা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। পুলিশ সংস্কার কমিশন আছে তারা সুপারিশ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে আমরা বিপ্লব পরবর্তি অবস্থার মধ্যে আছি। বিপ্লবের মধ্যেই ল’এন্ড অর্ডারের পরিবর্তন হয়। তবে সেটা তৈরি করতে কিছু দিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, যেকোন দেশে বিপ্লব পরবর্তি ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের ভিতরে যে নানা ধরনের শক্তির অংশ থাকে তাদের অনেক ভুমিকা রাখতে হয়। যেমন সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সহায়তা দরকার, সেটা আমরা বরাবর চাচ্ছি। পুলিশ অবশ্যই কঠোর হবে। তবে নিপিড়কের ভূমিকায় না যায় বা আমরা একটা পুলিশি রাষ্ট্র যেভাবে দেখেছি সেটা আমরা প্রত্যাশা করিনা। আমরা উভয় সংকটের মধ্যে আছি। আমরা আশা করছি সে জায়গা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারবো। আমরা কখনোই চাইনা পুলিশ জনগণের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়াক, আন্দোলনে গুল চালাক। অবশ্যই পুলিশ জনগণতে নিরাপত্তা দেবে সে জায়গায় পুলিশ কঠোর হবে।
গণমাধ্যমে হামলা ভাঙ্গচূড় হলে সেটা আমরা মেনে নেবো না অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। মানুষের মনেও নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেটা স্পষ্ট করা সেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
সম্প্রতি দ্যা ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসের সামনে আন্দোলন ও হামলা চালানো হয়েছে সেটা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি কিনা? সেক্ষেত্রে আপনারা কি ধরনের পদক্ষেপ নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সোমবার বলেছি ল এন্ড অর্ডারের সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙ্গচূড় হলে, সেটা অবশ্যই আমরা আইনগতভাবে দেখব।
তিনি বলেন, এটা কেবল আইনী বিষয় না, বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। মানুষের মনেও নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেটা স্পষ্ট করা সেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। মানুষের সঙ্গে সংলাপে বসে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে স্পষ্ট করা। তবে সরকার তার ভূমিকা যেটা আছে সেটা পালন করবে। গণমাধ্যমে হামলা ভাঙচুর হলে সেটা আমরা মেনে নেব না অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি জনগণ সভাসমাবেশ করলে শান্তিপূর্ণভাবে করবে সে আহবান জানিয়েছি। একই সঙ্গে পুলিশ যাতে দায়িত্বশীল আচরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ সমাবেশ করতে দেয় আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
গণমাধ্যমের ওপর যে বিক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা কি ষড়যন্ত্রের একটা অংশ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা যারা আন্দোলন করছে তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। তারা কেন বিক্ষোভ প্রকাশ করছে, এটা চিহ্নিত করা উচিত। এজন্য লাঠি পেটা করে সড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাদের সঙ্গে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, একটা মিথ্যা খবর গুজব অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেই জায়গায় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, তাদের নিজস্ব কোনো প্রচার মাধ্যম নেই। ফলে আমরা গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মী বাহিনী নেই বা গণমাধ্যম নেই তারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রচার করবে। সেজন্য আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিলো। সেটাকে রাতারাতি বদল করে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। তবে আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশকে গ্রামে ট্রান্সফার করা হয়েছে, মফস্বলের পুলিশ ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের একটু সময়লাগবে গুছিয়ে উঠতে। আর তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আমাদের অনেক তথ্য নিয়ে সহায়তা করে সে জায়গা থেকে আমরা সহায়তা কামনা করছি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের থেকে আমরা গঠন মূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। তারা সকল অংশী জনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিভিন্ন অংশী জনের সাথে আলোচনা করে, সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা কিংবা সংবাদ মাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন অংশীজন একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। এখানে অনেক পরস্পর বিরোধী অংশীজন থাকে। ওয়েজবোর্ডের কথায় যদি বলি, তাহলে সম্পাদক মালিক এবং রিপোর্টাররা একেক জন একেকটা পক্ষ নিবে। সবাই মিলে এক জায়গায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনন্য আইনগুলো আমাদের পর্যালোচনার মধ্যে আছে। সংস্কার কমিটিরও প্রধান কাজ হবে আইনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা। যত কম সংখ্যক আইন এবং কম বাধা তৈরি করা যায়, ততই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভালো।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, বিগত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আসলে কি ছিল, কারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ৫ আগস্টের পর কেউ যদি ভোল্ট পাল্টে ফেলে, এটাতো হওয়া উচিত নয়, তাকে সত্যটা স্বীকার করা উচিত। সত্যের মধ্যে দিয়ে আসলেই রিকনসিলেশন সম্ভব।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার আসলে একটি ভিন্ন ধর্মী সরকার। সেই জায়গায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের হয়তো অনেক ভুল থাকবে। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করলে আমরা সেটা আন্তরিকভাবেই নিব। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও সেই কথাই বলেছেন। গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে, এতে আমরা নিজেদের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাই, শুধরে নিতে পারি। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা থেকে আমরা গঠন মূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি।