ভয়েস অব আমেরিকা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৪ পিএম
ফাইল ফটো
দেশের ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে। সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনমতো সব সংষ্কার পর তবেই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশের।
ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার গত অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ দেশব্যাপী চালানো এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দুই মাস পর এই জরিপ চালানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা— এসব বিষয়ে ১৩ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়। দেশের আট বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার পক্ষে জরিপটি চালায় ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
জরিপ প্রতিবেদন বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া শহুরে জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রামে বসবাসকারীদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের মধ্যে এই হার ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ, নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ।
তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন চান, ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন চান তাদের ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী চান আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, নারীদের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ ও ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সরকার বলছে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করার পরই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারের কাজ শেষ করেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।
নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয় জরিপে। এতে অংশ নেওয়া ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষই উত্তর দিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা মনে করেন যে অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সেসবগুলো সংস্কার শেষ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত তাদের অধিকাংশ বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ, ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কারগুলো করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। পুলিশ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ, বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ, এবং অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার এর পক্ষে ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার চান ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা।