প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৪১ পিএম
রাষ্ট্রের শুধু পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, আর কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাবন্ধিক ও চিন্তক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ ছিল, জমিদারদের উপনিবেশ। আজ বাংলাদেশে আমরা উপনিবেশই দেখছি; আরেক ধরনের উপনিবেশ, ধনীদের উপনিবেশ। ঔপনিবেশিক শাসকরা যেমন এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করত না, আজ বাংলাদেশের ধনীরা সেই কাজই করে। তারাই আমাদের সম্পদ পাচার করে, ব্যাংক লুট করে, লুণ্ঠন চালায়। আর যতভাবে পারে অর্থ সঞ্চয় করে। কাজেই চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বানর যদি মানুষের পোশাক পরে, তাহলে কি সে মানুষ হয়ে যায়? রাষ্ট্র তো ওই বানরই রয়ে গেছে।
রবিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থিদের ভূমিকা এবং করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক কমরেড আ ফ ম মাহবুবুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সভাটি আয়োজিত হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বামপন্থিরা অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিলেও বিভাজনের কারণে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারেনি মন্তব্য করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আইয়ুববিরোধী ’৬৯-এর যে অভ্যুত্থান, সেটির চালিকাশক্তি ছিল বামপন্থিরা। এর সূত্রপাত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী করেছিলেন। তিনিই ছিলেন অভ্যুত্থানের পরিচালক। কিন্তু আমরা ’৭০-এর নির্বাচনে কী দেখলাম, ক্ষমতা চলে গেল বুর্জোয়াদের হাতে। রাষ্ট্র ’৪৭-এ বদলায়নি, ’৭১-এ-ও বদলায়নি। রাষ্ট্র যা ছিল, তা-ই রয়ে গেছে। বামদের চীনপন্থি ও রুশপন্থি বিভাজনে কত বড় ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা পরিমাপ করতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, বুর্জোয়া শাসক শ্রেণি প্রকৃত নির্বাচনকে ভয় পায়, সব সময় পেয়েছে। এখন আবার প্রকৃত নির্বাচনের সুযোগ জাতি আদায় করেছে এক স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটার পর এখন দেশে একটি রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে। দেশে সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত কার্যকর কোনো বিপ্লবী শক্তি নেই যারা ধনিক-ক্ষমতাশালী শ্রেণির বিপরীতে জনআকাঙ্ক্ষা ধারণ করে গণমুক্তির দিশা দিতে পারে। তাই এই শূন্যতাকে সুযোগ হিসেবে নেওয়ার সময় হয়েছে বামপন্থিদের। সব বাম দল মিলে যদি একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে পারে তাহলে গণমুক্তির সত্যিকারের বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পাকিস্তান আমলে ছাত্র আন্দোলনে দুটি প্রধান ধারা ছিল, একটি ছাত্রলীগ ও অন্যটি ছাত্র ইউনিয়ন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ১১ দফার ভিত্তিতে, যার নেতৃত্বে ছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, সেখানে বামপন্থি ছাত্র নেতাদের ভূমিকাই শীর্ষে ছিল। একইরকমভাবে ’২৪-এর জুলাই আন্দোলনও কোনো একক রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ছিল না। এখানেও বামপন্থি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের জনচেতনা ও জনজাগরণের চিত্রায়ণ হলো দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলো। অথচ এই জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার এই ভাব বক্তব্যগুলো বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
আ ফ ম মাহবুবুল হক স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক হারুনুর রশিদ ভুইয়া এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু।