× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুর্নীতিবাজ ‘সিন্ডিকেটের’ কব্জায় সমবায় অধিদপ্তর

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩২ এএম

সমবায় অধিদপ্তর। ফাইল ফটো

সমবায় অধিদপ্তর। ফাইল ফটো

সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান দায়িত্ব দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করা। কিন্তু সেই দায়িত্বে অবহেলা করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ব্যস্ত অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট ও পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার অসম প্রতিযোগিতায়! এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে এ সিন্ডিকেটটি অধিদপ্তর, জেলা ও থানা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব কুক্ষিগত করে রেখেছে। পাশাপাশি চুক্তিতে সমিতির নির্বাচন, নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়মবহির্ভূতভাবে পদ সৃষ্টি, ঘুষের বিনিময়ে পদোন্নতি, জাল সনদে চাকরি, উন্নয়নের নামে সমিতির কোষাগার থেকে লুটপাটের মতো নানা অপকর্ম করে চলেছে। অন্যদিকে দুর্নীতি-অনিয়মের কথা জানার পরও সেগুলোকে উপেক্ষার চোখে দেখে চলেছেন অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শরিফুল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে মহাপরিচালকের রয়েছে গভীর আঁতাত। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পরও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। বরং অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অনেককে বছরে দুই থেকে তিনবার বদলি করে হয়রানি করা হয়েছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে তার ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে। তা ছাড়া সম্প্রতি এই অধিদপ্তরের কর্মরত ব্যক্তিরা কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। আট দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় এই পরিষদটির পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে। 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক সরকারের সুবিধাভোগীরা এখনও সমবায় অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বহাল। এ কারণে ঢাকা বিভাগ, গাজীপুর মেট্রো থানাসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে এখনও সুবিধাভোগীরাই দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছেন। অধিদপ্তরে শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত নিবন্ধক, যুগ্ম নিবন্ধক, উপনিবন্ধক (প্রশাসন), জেলা সমবায় অফিসার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আঁতাত করেই সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর তিনি দায়িত্ব নিয়েই নিয়োগ, পদায়ন থেকে শুরু করে টেন্ডার কার্যক্রমে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর লুটপাটের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব কাজ দেওয়া হতো প্রতিমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিদের। গত সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও লুটপাটে নিমজ্জিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন শরিফুল ইসলাম নিজেকে ‘বঞ্চিত’ দাবি করে ভোল পাল্টে ডিজি পদে বহাল রয়েছেন।

বিগত সরকারের সময় সরকার প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫১১ পদে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে। এ সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্যে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট; পরে যা তদন্তে প্রমাণও হয়। এ কারণে গত ৫ জুন এ কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ পরীক্ষা বাতিল করা হলেও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বা উপসহকারী নিবন্ধকের কোনো পদ নেই। কিন্তু সংযুক্তিতে এই পদে কর্মরত রয়েছেন ৩৪ জন। এক্ষেত্রে একটি উপজেলা অফিসের অফিসপ্রধানকে সংযুক্তি দিয়ে মাঠের কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন সমবায় কার্যালয়ে অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদ না থাকার পরও দুর্নীতি করে এখানে এ পদে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। সমবায় অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় শাখাপ্রধান পদে দুজন কর্মরত থাকার পরও সেখানে দুজন উপসহকারী নিবন্ধককে সংযুক্তি করা হয়েছে। ক্লার্ক পদোন্নতির ক্ষেত্রেও লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব ড. অশোক কুমার বিশ্বাস ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুস সামাদ প্রধানকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে দেওয়া হয়। কমিটি ঘুষ-বাণিজ্যের প্রমাণও পায়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগÑ বাউনিয়া প্রজা কল্যাণ সমবায় সমিতি ২০১০ সালে ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট পিটিশন থেকে দেখা গেছে, এ জমির বিপক্ষে ধার্য করা মূল্য খুবই সামান্য। জমির লিজ প্রদানের ৬ ও ৭ নং শর্ত ওয়াকফ অধ্যাদেশ-১৯৬২ এর পরিপন্থি, লিজ প্রক্রিয়াও অবৈধ। সমিতি আইন-২০১৩ অনুযায়ী এখানে কোনো সদস্য রেজিস্ট্রার, বার্ষিক ও সাধারণ সভা এবং কার্যক্রম করা হয়নি। তারপরও জেলা সমবায় কার্যালয় ঢাকা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সমবায় অধিদপ্তরের লাইসেন্সকে ভিত্তি করে এ জমি ভোগদখল করছে প্রতারক চক্র। সর্বশেষ একটি গ্রুপকে এই সমিতির কমিটি হিসেবে অনুমোদন দিয়ে নতুন লাইসেন্স দেয় সমবায় অধিদপ্তর। যুবলীগের সদস্য মো. হিরন মিয়াকে দিয়ে এ কমিটি গঠনের জন্য তৎকালীন জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে চাপ দেওয়া হয়। তবে আইনসঙ্গত না হওয়ায় জেলা সমবায় কর্মকর্তা অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি দেন।

‘অফিস ও কমিটি না থাকার পরও বাউনিয়া প্রজা কল্যাণ সমবায় সমিতি নির্বাচন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তা না মানায় তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে’Ñ এমন প্রশ্নের উত্তরে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফাইল না দেখে বলা যাবে না।’ বাউনিয়া সমিতির পুনর্বাসন করার কথা বলে মানুষজনের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের কথা জানালে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তার জানা নেই।

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘হ্যাঁ, বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পরীক্ষা হতে পারে।’ এ বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক (প্রশাসন) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ চাইলে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সে অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে।’ কোনো পদবাণিজ্য নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা