বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০০ এএম
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০১ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে আঁকা ছবি, গ্রাফিতি, লিখন যাতে সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে না যায়, তাই দেয়ালগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এই দাবি জানান তিনি। ‘দেয়ালে আঁকা নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই আয়োজন করে ভাববৈঠকি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও প্রেজেন্টেশন দেন সাংবাদিক ও গবেষক মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কবি ও ভাবুক ফরহাদ মজহার, বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, শিল্পী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ ও প্রেজেন্টেশনে মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান আন্দোলনের সময়ে এবং আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণরা যে গ্রাফিতি এঁকেছেন, দেয়াল লিখন করেছেন তার চিত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো তুলে এনেছেন তিনি নিজেই। আন্দোলনের সময়ে আঁকা গ্রাফিতি ও দেয়ালের লিখনগুলো কীভাবে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছে, আর আন্দোলনের পরে আঁকা ছবিগুলো আন্দোলনের স্মৃতিগুলোকে কীভাবে জাগিয়ে তুলেছে তা ব্যাখ্যা করেছেন। এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের অঙ্কনশৈলীর প্রশংসাও করেছেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, আজকের দেয়ালগুলোতে যে নানা চিত্র, গ্রাফিতি, লিখন সবগুলোই আমাদের স্মৃতিচারণ। কোনও একটি রাজনৈতিক ঘটনা ঘটার পরে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এই স্মৃতিচারণ, এটি নানাভাবে, নানা দিক থেকে হতে পারে। আজকে যে ছবিগুলো দেখলাম, যে স্মৃতিচারণ করা হলো এটিও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। গ্রাফিতি নতুন কিছু নয়। আন্দোলনের সময়ে যে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে তার একটা তাৎপর্য রয়েছে। এই গ্রাফিতি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায়, মানুষের কাছে একটি সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনার বার্তা দিতে চায়।
‘স্মৃতি আমাদের পরাজিত না হওয়ার শক্তি’ উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, গ্রাফিতি আমাদেরকে প্রশ্ন করে যে শিল্প কী, শিল্পের উদ্দেশ্য কী! শিল্প একইসঙ্গে স্বভাবতই নতুন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্য। এটি পুরোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে অথবা তার ক্ষয়ের ভিত্তিগুলো, ইডিওলজিকাল ভিত্তিগুলো নষ্ট করে দিয়ে নতুন ভিত্তি তৈরি করে। আমি মাহমুদুজ্জামান যে ছবিগুলো তুলেছেন সেগুলো দেখলাম, তার গবেষণার যে ফল সেটি দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে আমাদেরকে পরাজিত করা যাবে না। কারণ এই গ্রাফিতি, ছবি আমাদের মেমোরি, আমাদের স্মৃতি। এটিকে ধরে রাখতে হবে।
শহরের দেয়ালগুলোকে সংরক্ষণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে, সেগুলোর একটি হলো-কয়েকদিন পরই কিন্তু এই দেয়ালগুলো মুছে ফেলা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দুর্বল হতে থাকবে তখনই দেয়ালের লিখনগুলো মুছতে শুরু হবে। যদি আমরা আমাদের স্মৃতিগুলোকে বাঁচাতে চাই, তাহলে আমাদের এখন থেকেই দাবি তুলতে হবে।