বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০০:৪৭ এএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০০:৫১ এএম
সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ৪০টি সংগঠনের নেতারা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ৪০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণসমাবেশে এ দাবি জানান তারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. নির্মল রোজারিও। সমাবেশ শেষে জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সংখ্যালঘু ঐক্যজোট আয়োজিত গণসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় গেলেও অতীতের কোনো সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাই সংখ্যালঘুদের সামনে বৃহত্তর আন্দোলনের বিকল্প নেই।
সরকারের প্রতি অভিযোগ করে নির্মল রোজারিও বলেন, সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ (চিন্ময় প্রভু) ১৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের নামেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ওই সকল মামলা বাতিল না করা হলে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
হামলা-মামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র ব্রক্ষ্মচারী বলেন, ‘সারা দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। বাড়িঘর দোকানপাঠ লুটপাট হয়েছে। সরকারের প্রশ্রিুতি সত্ত্বেও তাদের মধ্যে আতংক কাটেনি। কিন্তু সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ তো দূরের কথা, নির্যাতন নিপীড়ন যে হচ্ছে, সেটাই স্বীকার করছে না। বরং ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি করা হচ্ছে। সেটা হলে সারা বিশ্বে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশে আমরা ভালো নেই। আমরা চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেল এজাহার। আন্দোলন বন্ধে মামলা-হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এই শহীদ মিনারে আমরাও ছিলাম। কিন্তু তিন কোটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ দফা না মালনে বৈষম্যহীন দেশ গঠন সম্ভব নয়। তাই দাবি মানতে হবে।’ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, জনসংখ্যার অনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব, পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নসহ ৮ দাবিতে আয়োজিত ওই সমাবেশে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
গণসমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ড. এম কে রায়, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেমন্ত কোরাইয়া, সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক দীপক কুমার শীল প্রমূখ।