প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৪৩ পিএম
ঘূর্ণিঝড় দানা
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের উড়িষ্যার দিকে গেলেও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৪ জেলার মানুষ আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব অঞ্চলে ২-৩ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তা ছাড়া দানায় প্রবল বাতাসের কারণে বৃহস্পতিবার বরগুনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল ও চাঁদপুর রোডে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দানা আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার বা সর্বাধিক ১২০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাত সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. ছাদেকুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দানার কারণে বাংলাদেশে তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে প্রবল বাতাসে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তা ছাড়া প্রবল আকারে বৃষ্টিপাত হবে না। কোথাও কোথাও হয়তো বৃষ্টি হবে, তবে সেটি বড় আকারে নয়। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক আজ রাতে বলেন, দানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে ভারতে আঘাত হানবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় ১৪ জেলায় ২-৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, দানার প্রভাবে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা; বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ঝালকাঠী, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল এবং অদূরবর্তী দ্বীপ অঞ্চলে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
গাছের ডাল ভেঙে একজনের মৃত্যু
প্রতিদিনের বাংলাদেশের বেতাগী (বরগুনা) প্রতিবেদক জানান, বরগুনার বেতাগীতে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে আশ্রাব আলী হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কিসমত ছোট মোকামিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪ আশ্রয়কেন্দ্র, ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে
খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সেখানে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ও তিনটি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া প্রস্তুত রয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উত্তাল সাগর, পর্যটনে বাধা
কক্সবাজার প্রতিবেদক জানান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের গোসলে নামা বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন লাইফগার্ডসহ প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটিটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে একটি বার্জের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বরিশালে বৃষ্টি, লঞ্চ চলাচল বন্ধ
বরিশাল প্রতিবেদক জানান, দানার প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কখনও গুঁড়িগুঁড়ি কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে। এতে জনজীবন বিঘ্নিত হয়েছে। এমন অবস্থায় অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
পটুয়াখালীতে দমকা হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টি
পটুয়াখালী প্রতিবেদক জানান, দানার প্রভাবে সকাল থেকেই পটুয়াখালীসহ উপকূল জুড়ে থেমে থেমে প্রচণ্ড বাতাসসহ বৃষ্টি হয়েছে। কখনও বাতাস ও বৃষ্টি থেমে যায় আবার কখনও প্রচণ্ড আকারে শুরু হয়। এদিকে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভোলায় উত্তাল নদী, উৎকণ্ঠায় উপকূলবাসী
ভোলা প্রতিবেদক জানান, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ভোলায় কখনও গুঁড়িগুঁড়ি ও কখনও হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলার সাত উপজেলাই বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি। দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে জেলার বিচ্ছিন্ন ১১টি চরের ৫৭ হাজার ৫৭২ জন মানুষ।
মাগুরায় দিনব্যাপী বৃষ্টি
মাগুরা প্রতিবেদক জানান, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে মাগুরাসহ চার উপজেলায় দিনব্যাপী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, শীতের আগাম সবজি তুলতে বীজতলা তৈরি করেছিলাম, এই বৃষ্টিতে সম্ভবত মাইর হবে। দশ দিন আগের অতিবৃষ্টিতে সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়।
বরগুনায় থেমে থেমে বৃষ্টি
বরগুনা প্রতিবেদক জানান, দানা মোকাবিলায় বরগুনায় ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ বেড়ে গেলে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কলাপাড়া উপকূল জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক জানান, পটুয়াখালীতে দানা মোকাবিলায় কলাপাড়ায় ১৯টি মুজিব কেল্লাসহ ১৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় ৮২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটে উপকূল জুড়ে আতঙ্ক
বাগেরহাট প্রতিবেদক জানান, দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট জুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। বসতবাড়ি, গবাদি পশু ও মৎস্যঘের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।
পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য হেনা বেগম বলেন, রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেড়িবাঁধের বাইরে। যেকোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দানার খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি, যাতে মানুষের জানমালের ক্ষতি কম হয়।
সাতক্ষীরা উপকূলে বৃষ্টি
সাতক্ষীরা প্রতিবেদক জানান, সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। এরই মধ্যে উপকূলবাসী দানা হানা দেওয়ার প্রারম্ভে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে আড়াই কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
মোরেলগঞ্জে ৪ লাখ মানুষ দানার আতঙ্কে
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিবেদক জানান, দানার আতঙ্কে উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ৪ লাখ মানুষ পানগুছি নদীতীরবর্তী ৩০ গ্রামের শত শত পরিবারের নির্ঘুম রাত। তাদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কথা হয় নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা বখতিয়ার হোসেনের সঙ্গে।
চাঁদপুরে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
চাঁদপুর প্রতিবেদক জানান, দানার প্রভাবে চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-চাঁদপুর রুটে লঞ্চ চলাচল করলেও নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ-মতলব রুটের যাত্রাবাহী ছোট নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল।
মোংলা বন্দরে ৭টি জাহাজে পণ্য ওঠানামা ব্যাহত
মোংলা প্রতিবেদক জানান, দানার প্রভাবে সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বন্দরে অবস্থানরত সাতটি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সতর্ক অবস্থায় থেকে বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজ ও জেটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে কর্তৃপক্ষ।