প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ২২:২১ পিএম
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৪ পিএম
রাজধানীর বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের গুলিতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল(২৪) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও সাউন্ড গ্রেনেডে আহত আরিফ (২০)।
গুলিবিদ্ধ বিশাল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করি। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়ি। ওইখানে ছাত্রভঙ্গ করার জন্য তারা ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে। এ সময় কয়েকটি গুলি এসে আমার পায়ের গোড়ালিতে ও কোমরের নিচে লাগে। আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে লেখাপড়া করি।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ যদি আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় তাহলে আমরা কেন দেশ স্বাধীন করলাম? পুলিশ আমাদের বন্ধু কিন্তু তারা আমাদের ওপর কেন গুলি চালাল?
আহত আরিফ বলেন, আমরা বঙ্গভবনের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করছিলাম। ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়ে। এ সময় আমার পায়ের ওপর একটি সাউন্ড গ্রেনেড এসে পড়ে। এতে আমি আহত হই। আমি সিদ্ধেশ্বরী কলেজে লেখাপড়া করি। গুলিবিদ্ধ শফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বঙ্গভবনের সামনে এসেছিলাম। আমি ব্যবসা করি। এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, বঙ্গভবনের সামনে থেকে আহত অবস্থায় তিনজন এসেছেন। এদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে
মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরতরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শর্টগানের গুলিও ছুঁড়ে পুলিশ। এতে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি বিক্ষুব্ধ জনতা। আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ ব্যারিকেডের উপরে ওঠে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাত ৮টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের সামলাতে ৮টা ২৫ মিনিটে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। এ সময় পুলিশের সদস্যরা ব্যারিকেডের ওপাশে বঙ্গভবনের দিকে সরে যান। এরপর বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা বঙ্গভবন ও রাজউকের মাঝ থেকে পুলিশের জলকামান সরিয়ে দেন। পরে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান উপস্থিত সেনাসদস্যরা।
রাত ১০টার দিকে রাজউকের সামনে দিয়ে পুলিশের একটি ভ্যান গাড়ি যেতে দেখে আন্দোলনকারীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগানে ধাওয়া দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশ ভ্যানটিকে আটকিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। ভ্যানটিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে।