প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৩ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২০:১৮ পিএম
রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলা
সারা দেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।
কাপ্তাই (রাঙামাটি) : রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বর্ণাঢ্য নৌ-র্যালির মাধ্যমে অশ্রুসিক্ত নয়নে দেবী দুর্গাকে বির্সজন দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা আয়োজন ও আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হাজার হাজার ভক্তের জয়ধ্বনিতে কর্ণফুলী নদীর দুইপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে।
প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীতে বিজয়া দশমীর নান্দনিক এই আয়োজনে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। রাঙামাটির প্রতিটি পূজামণ্ডপে সুন্দর, সুশৃঙ্খল পরিবেশে দূর্গাপুজা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাপ্তাইয়ের সাবেক ইউএনও ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, নাসরীন সুলতানা, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন, কাপ্তাই উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) স্বরূপ মুহুরি, কাপ্তাই সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান, কাপ্তাই থানার ওসি মো. মাসুদ, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আনচারুল করিম, কাপ্তাই উপজেলার সাবেক উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন প্রমুখ।
কক্সবাজার : কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘বিজয়া সম্মেলন’। যেখানে নানা ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য, ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষে হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, ‘সৈকতে ৩ লাখের অধিক মানুষের সমাগমের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে। যেখানে ৫০টির অধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।’
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চের ‘বিজয়া সম্মেলন’ সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, কক্সবাজারে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল, এবি পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম ফারুক কায়সার, জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুর প্রমুখ।
ফেনী : বেদনা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে ফেনীতে প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়েছে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ডিডিএলজি গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
ফেনী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি হীরা লাল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন ফেনী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শুকদেব নাথ তপন, সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস, পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত।
শ্রীপুর (মাগুড়া): মাগুরার শ্রীপুরে আজ রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দূর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যায় উপজেলার ১৩৫টি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনোরঞ্জন সরকার জানান, এ বছর উপজেলার ১৩৫টি মন্দিরে পূজা উদযাপিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় কোথাও কোনো অপ্রীতকর ঘটনা ঘটেনি। সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
খাগড়াছড়ি : সারা দেশের মতো খাগড়াছড়িতেও হাসি-আনন্দে বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে দেবীকে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় জানালেন সনাতনী সম্প্রদায়।
সনাতনী সংগঠক জয় প্রকাশ ত্রিপুরা বলেন, মহা দশমীর বিহিতপূজা ও দর্পণ-বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব। আবারও আরেকটি বছর অপেক্ষার পর দেবী দুর্গার দর্শনের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, খাগড়াছড়িতে এবার ৬১টি পূজামণ্ডপ থেকে ৫৮টি পূজামণ্ডপের দুর্গা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবং ৩টি ঘটপূজা হওয়ায় বিসর্জন দেওয়া হয়নি। দুর্গোৎসব শুরু থেকে বিসর্জন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গাপুজা। বিকালে পৌরশহরের রাধামাধব আখড়া থেকে বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতি প্রতিমা নিয়ে বের হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ভক্তদের কাঁদিয়ে বিদায় নেয় দেবী দুর্গা। ঢাক ঢোল বাদ্যের তালে দেবী দূর্গাকে নিয়ে বড় বাজার তিতাস নদীর দশমী ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে আরও কয়েকটি প্রতিমা নিয়ে আসে মন্দির সংশ্লিষ্টরা। একে একে প্রতিমাগুলো তিতাস নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা উলু ধ্বনির মাধ্যমে দেবী দূর্গাকে বিদায় জানায়। উপস্থিত নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের সনাতন ধর্মের লোকজন রীতি অনুযায়ী সিঁধুর খেলায় মেতে ওঠেন। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয় দেবী দূর্গাকে। এছাড়াও একই সময়ে উপজেলার অন্যান্য মন্দিরের প্রতিমা নিজ নিজ এলাকায় বিসর্জন দেওয়া হয়।
রাধামাধব আখড়া মন্দিরের নির্বাহী সভাপতি চন্দন কুমার ঘোষ বলেন, এ বছর আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দুর্গাপুজা উদযাপন করেছি। স্মরণকালের মধ্যে এ বছর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বোধ করেছি। যা আগে দেখিনি। বিশেষ করে সেনাবাহিনী, বিজিবির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
৯ অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় দুর্গাপূজা বিজয়া দশমী মধ্য দিয়ে আজ রবিবার শেষ হলো।