প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৭ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০০ এএম
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও কমিশন গঠনসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এক ঘণ্টার সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন করা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘এক নম্বর অগ্রাধিকার’। তিনি জানান, ‘বিষয়গুলো তারা অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে দেখছেন। তারা মনে করেন, আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।’
গতকাল শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান।
অন্যদিকে, গতকাল সংলাপ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, তার দল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে। একটি সংস্কারের ও অন্যটি নির্বাচনের। সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। তবে তাদের কাছে নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জামায়াতে ইসলামী আগামী ৯ অক্টোবর সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবনা জাতির সামনে তুলে ধরবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে, সে সম্পর্কে আমাদের চিন্তা তুলে ধরা হবে।’
তৃতীয় দফা সংলাপে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও সিপিবির নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয়টি দল, গণতন্ত্র মঞ্চের পাঁচটি দল, হেফাজতে ইসলামের চারটি দল, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ (নুর) ও এবি পার্টি অংশগ্রহণ করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি তৃতীয় দফা সংলাপ। এর আগে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ১২ আগস্ট প্রথম এবং ৩১ আগস্ট দ্বিতীয় দফা সংলাপ করেন।
‘এনআইডি স্বরাষ্ট্রে দেওয়ার আইন বাতিল করতে হবে’
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে যমুনায় গিয়ে প্রথমে সংলাপে অংশগ্রহণ করে বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল জানান, তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন। প্রধান আলোচনা ছিল, নির্বাচনসংক্রান্ত এবং নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার ও কমিশন নিয়ে।
সংলাপে ছয় সদস্যের বিএনপি প্রতিনিধিদলে ছিলেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
সংলাপে আবারও নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। কবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি।’
জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়ার যে আইন করা হয়েছে বিগত সরকারের সময়ে, সেটিও বাতিল চেয়েছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না থাকে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের সময় গঠিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব জানান, ২০১৪ সাল থেকে পরপর তিনটি বিতর্কিত ও ভুয়া নির্বাচন করেছে যেসব নির্বাচন কমিশন, সেই কমিশনগুলোর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন তারা। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের অনেক সহযোগী কাজ করছেন জানিয়ে তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং অভিযোগ উঠেছে এমন জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ ও ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথাও সংলাপে আলোচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
‘একাধিক উপদেষ্টাকে সরাতে বলা হয়েছে’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দুয়েকজন আছেন, যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটকে ব্যাহত করছে। তাদের সরানোর কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতিবঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।’
বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশিরভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এখনও। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন। তাদের অপসারণের কথা বলেছি। অতি দ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, যাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে … দুর্নীতি অথবা হত্যায় সুনির্দিষ্ট মামলায় ... তাদের দেখতে পাচ্ছি যে, জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি। ২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলের সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণার কথা বলেছি।’
‘দেশ ছেড়ে কীভাবে পালাচ্ছে’
সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুনতে পাই, সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেÑ এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যে সমস্ত ক্যাম্পেইন চলছে, যে সমস্ত অপপ্রচার চলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি। বলেছি, তারা যেন ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে কারা আছে, তা উদ্ঘাটনের ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন, তারা জাতিসংঘের টিমকে সেভাবে সহযোগিতা করছে না। এ বিষয়টিও বলেছি।’
‘হিন্দুদের ওপর নির্যাতন সর্বৈব মিথ্যা’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ করেছেন যে, সনাতনী কিছু মানুষ…সবাই না, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছেÑ যা সর্বৈব মিথ্যা। আমরা বলেছি, এটা তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এই কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংলাপ শেষে বেরিয়ে সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনায় জামায়াত নেতারা সংস্কারকে ‘এক নম্বর অগ্রাধিকার’ হিসেবে তুলে ধরে বলে জানান দলটির প্রধান শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের সময় কী হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুটি বিষয় চেয়েছি, একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটা নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। দুটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছে। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা থেকে বঞ্চিত হয়েছেÑ একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনÑ সেইটা উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন, আমরা সেই বিষয়ে কথা বলেছি।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘জনগণ এবং সরকার একসঙ্গে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে পারে, সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে, সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান যে সরকার আছে তারা কোনো পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ছোট্ট নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম, সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এটা নিয়ে আমরা অচিরেই কাজ করব। এতে দেরি হবে নাÑ এভাবে আমরা সামনে এগোতে চাই।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কীÑ এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে, একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মের ভাইবোনেরা উদযাপন করতে পারবে।’
আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেনÑ নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও আ ন ম শামসুল ইসলাম।
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার : বাম গণতান্ত্রিক জোট
সংলাপের পর বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।’
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে পৌনে ৭টা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাম জোটের এ সংলাপ হয়।
প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সব সংস্কারের দায়িত্ব এই সরকারের না। সংস্কারের লক্ষ্যে যে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে সেগুলোর কার্যপরিধি এবং রোডম্যাপ সম্পর্কে জানালে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে। কমিশনের প্রধানদের নিয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান নিয়ে বিতর্ক এবং সন্দেহ অনভিপ্রেত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধন দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগই যথার্থ হবে বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত না করার আহ্বান জানিয়েছি। রাজনীতি বন্ধের নামে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, এটা করা যাবে না।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হত্যার বিচার করতে হবে। কিন্তু এসব ট্রাইব্যুনালে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা চাই আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটা ভালো নির্বাচন দিয়ে যার যার জায়গায় ফিরে যাবেন।’ তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের পূজা উৎসব এবং আদিবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে নজর দিতে হবে। স্বল্প মজুরি, বকেয়া মজুরি, বন্ধ কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তাÑ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জন্ম হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, মালিকপক্ষের চুক্তি না মানার প্রবণতাসহ সমস্যার যথাযথ সমাধান না হলে আবার সংকট তৈরি হতে পারে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে সংলাপে ছিলেন জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ্ আলম, বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সংস্কার শেষে করে নির্বাচন : গণতন্ত্র মঞ্চ
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেই নির্বাচনে যাওয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের পর সাংবাদিকদের কাছে মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আবার যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, সে কারণে সংস্কার আগে প্রয়োজন। তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো করেই নির্বাচনের পথে যেতে হবে। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রতিনিধিদলে সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি ছাড়াও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আকবর খান, আবুল হাসান রুবেল, আবু ইউসুফ সেলিম ও ইমরান ইমন।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন চেয়েছে ইসলামী আন্দোলন
সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। গতকাল শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে এ প্রস্তাব দেন আমির চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
ইসলামী আন্দোলন আরও ৯টি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হলোÑ আইনবিষয়ক সংস্কার কমিশন, নাগরিক সেবাবিষয়ক সংস্কার কমিশন, পররাষ্ট্রবিষয়ক সংস্কার কমিশন, শিক্ষাবিষয়ক সংস্কার কমিশন, বাকস্বাধীনতা বিষয়ক সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, শ্রমজীবীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠীবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে এই সংলাপে অংশ নেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও সিনিয়র সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ।
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় হেফাজত
তাড়াহুড়ো বা বেশি দেরি না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংলাপ শেষে রাত ৮টার দিকে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ কথা বলেন হেফাজতে ইসলামভুক্ত দল খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আরও একটি শিক্ষা কমিশন গত ৩০ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়েছে প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়ে। সেক্ষেত্রেও কিছু আপত্তির জায়গা রয়েছে। এই কমিশনে এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা বিগত সরকারের হয়ে কাজ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বিপক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। আমরা এই বিষয়গুলোতে আরও সতর্ক থাকতে বলেছি।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করে হেফাজতে ইসলামের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধিদলে ছিলেনÑ মাওলানা শায়খ সাজেদুর রহমান, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবদুল বাসেত আজাদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ এবং মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে এবি পার্টি
দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। এ ছাড়াও তারা ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে।
গতকাল যমুনায় সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এবি পার্টির পক্ষ থেকে ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা দাবি, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে এ প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়াতে বলেছে গণঅধিকার পরিষদ
সরকারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়াতে বলেছে গণঅধিকার পরিষদ (নুর)। সংগঠনটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপও চেয়েছে।
গতকাল যমুনায় সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করার পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও সংসদের মেয়াদ ৪ বছর করার প্রস্তাব করেছেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফাতেমা তাসনিম ও অ্যাডভোকেট নূরে এরশাদ সিদ্দিকী।