প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:০১ পিএম
ফাইল ফটো
দেশে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট ২৯৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সময়ে আহত হয়েছে ৭৩ জন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে তিন জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট ও হবিগঞ্জে। এসব জেলায় ১৩ জন করে মারা গেছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান নির্বাহী আবদুল আলীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম জানায়, দেশের জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে বজ্রপাতে হতাহতের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, মোট ২৯৭ জন প্রাণহানির মধ্যে ১১ জন শিশু, ৫৫ জন নারী রয়েছে। নারীর মধ্যে ৬ জন কিশোরী। এ ছাড়া মোট মৃত্যুর মধ্যে ২৪২ জনই রয়েছে পুরুষ। পুরুষের মধ্যে কিশোরের সংখ্যা ১৭ জন। এ বছরের ৮ মাসে শুধু কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে ১৫২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গরু আনতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন রাশিম মোল্লা। দফাগুলো হলো, পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাত সচেতনতার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা, ৩০ মিনিট আগেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানা যায়, গভ ইন ফোর মাধ্যমে তা জানানো, কৃষকও জনসাধারণের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মাঠে মাঠে শেল্টার সেন্টার স্থাপন এবং আহতদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মাসের বজ্রপাতে হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ১ জন। মার্চ মাসে নিহত হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে ৮ জন পরুষ ও ১ জন নারী রয়েছে। এ মাসে আহত হয়েছে ৬ জন। এর মধ্যে ৬ জনই পুরুষ। এপ্রিল মাসে ৩১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১১ জন নারী ও ১ জন শিশু এবং ২ জন কিশোরী রয়েছে। এ মাসে আহত হয়েছে ১ জন পুরুষ। মে মাসে নিহত হয়েছে ৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ জন, নারী ১৭ জন, শিশু ২ জন এবং কিশোর ২ ও কিশোরী ১ জন। এ মাসে ২৮ জন আহত হয়েছে। তার মধ্যে পুরুষ ২৩ জন, নারী রয়েছে ৫ জন। জুন মাসে নিহত হয়েছে ৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬১ জন, নারী ১৬ জন, শিশু ৫ জন, পুরুষের মধ্যে কিশোর রয়েছে ৭ জন। এ মাসে আহত হয়েছে ১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ জন, নারী ২ জন। জুলাই মাসে মোট নিহত হয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে নারী ১ জন এবং ১৮ জনই পুরুষ। এ মাসে আহত হয়েছে ১০ জন। এর মধ্যে ১ জন নারী এবং ৯ জনই পুরুষ রয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাসে বজ্রপাতে মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে ১ জন শিশু, ১ জন কিশোর ও ১ কিশোরী। এ ছাড়া এ মাসে আহত হয়েছেন ২ জন পুরুষ। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে বজ্রপাতে মোট ৪৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন পুরুষ ও ৬ নারী রয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে ২ জন শিশু রয়েছে। পুরুষের মধ্যে ৪ জন কিশোর ও নারীর মধ্যে ২ জন কিশোরী রয়েছে। এ মাসে আহত হয়েছে ১২ জন। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী রয়েছে। এ বছর সবচেয়ে যেসব জেলায় নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩ জন, জয়পুরহাটে ১৩ জন, হবিগঞ্জে ১৩ জন, ফেনিতে ১২ জন, কক্সবাজারে ১০ জন এবং গাইবান্ধায় ১০ জন। ধান কাটা, ঘাস কাটা, গরু আনা ও নানান ধরনের কৃষিকাজের সময় বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের ৮ মাসে শুধু কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে ১৫২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গরু আনতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার সময় ৫২ জন জেলের মৃত্যু হয়েছে। আম কুড়ানোর সময় ১১ জন, ফাঁকা রাস্তায় চলাচলের সময় ১৫ জন, ঘরে থাকাকালীন ২৭ জন, পাথর উত্তোলনের সময় ৩ জন,বাড়ির আঙ্গিনায় খেলার সময় ১৪ জন শিশু-কিশোর ও গাড়িতে থাকাকালীন ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মারা গেছে মে ৯৬, জুনে ৭৭, সেপ্টেম্বর ৪৭, এপ্রিল ৩১, জুলাই ১৯, আগস্ট ১৭, মার্চ ৯ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ১ জন মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সবচেয়ে বেশি মারা গেছে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত খেটে খাওয়া মানুষ। বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় একাধিক মন্ত্রণালয় বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সচেতনতার অভাবেই বহু মানুষের প্রাণ হানি ঘটছে। কিন্তু সরকারে পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকরী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।