অন্তর্বর্তী সরকার
পারভেজ খান
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫০ এএম
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫৬ এএম
পুলিশে সংস্কার নিয়ে শিগগিরই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিশন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব ও পরামর্শ নেওয়ার কাজ। এই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পুলিশের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করা। পাশাপাশি কেন আস্থা হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছে সেই কারণগুলো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া। অর্থাৎ সংস্কারে হাত দেওয়ার আগে সমস্যাগুলো নির্ণয় করাই তাদের প্রথম কাজ। সব মহলেরই অভিযোগ, পুলিশকে সব সময় ক্ষমতাসীন দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার ফলে এই বাহিনীর সদস্যরা নিজেদেরকে জনগণের সেবক ভাবার পরিবর্তে নিজেদের প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী ভাবতে শুরু করেন।
দীর্ঘমেয়াদে তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে এই মনোভাবেরই দৃষ্টিকটু প্রতিফলন ঘটতে থাকে। কাজেই জোর পরামর্শ এসেছে, সবার আগে এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে যেন পরিবর্তন নিশ্চিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের জন্য ভিন্ন একটা বিশেষ কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। যার নাম হতে পারে জাতীয় পুলিশ কমিশন। এর কাঠামো এমন শক্তিশালী হবে যে চাইলেই প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এককভাবে এই বাহিনীর কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কমিশন হবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও দলীয় প্রভাবমুক্ত। যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে কমিশনের সদস্যদের দেওয়া স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব ও আইজিপিও এই কমিশনের সদস্য থাকবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর ছয়টি কমিশন গঠন করে। এসব কমিশন কাজ শুরু করবে আগামী অক্টোবরে। ডিসেম্বরে তারা রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর এসব রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পর্যালোচনার পর উন্মুক্ত করা হবে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বাহিনীতে সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও কেবল সেটাই যথেষ্ট নয়। বরং পুলিশে সংস্কার করতে হবে বৃহত্তর প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে। শুধু পুলিশের সংস্কার করে এই সংস্থাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যাবে না। এই সংস্কার তেমন কোনো কাজেই আসবে না। কারণ কেবল পুলিশের সংস্কারই যথেষ্ট নয়, প্রশাসনের অন্যান্য ক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতন অংশ যদি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকে, তাহলে পুলিশ বাহিনী থেকে দুর্নীতি দূর করা কল্পনাই থেকে যাবে। তাই আগে বৃহত্তর পরিসরে পুরো প্রশাসনকেই নীতি-নৈতিকতা এবং দেশপ্রেমের মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে হবে। কারো হুকুম নয়, পুলিশ যা করবে তা শুধু তাদের প্রবিধান বা আইন অনুযায়ী করবে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন কাজ, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শাস্তি এবং চাকরিচ্যুতি সবই বাস্তবায়িত হয় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ মহলের মর্জিতে। সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় নিয়োগ আর বদলিতে। এখানে চলে অর্থ আর রাজনৈতিক প্রভাবের খেলা। ফলে পুলিশকে সংস্কার করতে হলে শুধু পোশাক আর মনোগ্রাম পাল্টালে চলবে না, একই সঙ্গে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তির সুপারিশের যেকোনো সুযোগ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় নৈতিক মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিবেচনায় রাখতে হবে, পুলিশ বাহিনীর মূল সমস্যা হচ্ছে এই সংস্থাকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণ করে ফেলা। পুলিশের এমন রূপ এক দিনে তৈরি হয়নি। দিনের পর দিন এই বাহিনীতে চলতে থাকা অনিয়ম আর বেআইনি কার্যক্রমকে এড়িয়ে গেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।
পুলিশে সংস্কারের দাবি অবশ্য নতুন নয়। ২০০৭ সালে এর একটি খসড়াও প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সেটা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন যেহেতু ক্ষমতায় কোনো রাজনৈতিক দল নেই, কাজেই এই সুবাদে সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারলে সেটা দেশ এবং পুলিশ বাহিনীর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
সংস্কারের বিষয়ে যেসব চিন্তাভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের জন্য যে আচরণবিধি রয়েছে সেটা যাতে যথাযথভাবে মানা হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে কমিশন এবং পুলিশ প্রধান। এমনকি পুলিশের বিভাগীয় বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনালও গঠন করা যেতে পারে।
আরও বলা হচ্ছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে চুক্তিভিত্তিক কোনো নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এতে পুলিশের শীর্ষমহলে জট বাঁধে এবং অসন্তোষ দেখা দেয়। কাজের স্পৃহা হারান পদবঞ্চিতরা। আলোচনায় থাকা আরেকটি বিষয় হচ্ছেÑ ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা পুলিশ হেফাজতে কারও মৃত্যু হলে সেগুলোর আইনগত দিক খতিয়ে দেখার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি পৃথক সেল রাখা জরুরি। এই সেলের প্রধান হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখা যেতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পুলিশের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে পুলিশে মোট ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। এই দেড় দশকে কনস্টেবল, এসআই ও পুলিশ সার্জেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে, যা মোট পুলিশ সদস্যের প্রায় অর্ধেক। যদিও এ নিয়োগের বড় অংশই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে মূলত ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে।
জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র মতে, ২ লাখ ১৩ হাজার পুলিশের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৫ জন কনস্টেবল, ১১ হাজার ৫১০ জন এসআই ও ২ হাজার ৪৮৪ জন পুলিশ সার্জেন্টকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর। এসআই ও সার্জেন্ট পদে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে। এই মেয়াদে এসআই পদে ৪ হাজার ৯০৮ জন ও সার্জেন্ট পদে ৭২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৯-২০১৩ সময়কালে এসআই পদে ৩ হাজার ৭৫১ ও সার্জেন্ট পদে ৪২৬ জনকে এবং ২০১৪-২০১৮ সময়কালে এসআই পদে ২ হাজার ৮৪৫ ও সার্জেন্ট পদে ৪২৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত দেড় দশকে দেশে ৬৪টি নতুন থানা ও ৯৭টি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই সময়কালে পুলিশের জন্য মোট ২ হাজার ৭৬০টি পিকআপ, ৫২৪টি জিপ, ৩৫৪টি ট্রাক, ১৩টি এপিসি, ১৭৮টি জলযান এবং ৭ হাজার ৬৩৪টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্রেরও আধুনিকায়ন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারে পুলিশের যানবাহনের সংখ্যা আরও বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের কথা বলা হবে। পুলিশের বেতন-ভাতা নিয়েও নতুন করে ভাববে কমিশন। একজন পুলিশ কনস্টেবলের যোগদানকালীন মাসিক বেতন বেসিক ৯ হাজার টাকা এবং সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ২৮৫ টাকা।
অন্য পদগুলোর মধ্যে বর্তমানে আইজিপি ৮২ হাজার, অতিরিক্ত আইজিপি ৭৮ হাজার, ডিআইজি ৬৬ হাজার, অতিরিক্ত ডিআইজি ৫৬ হাজার ৫০০, এসপি ৪৩ হাজার, অতিরিক্ত এসপি ৩৫ হাজার, সিনিয়র এএসপি ২৯ হাজার, এএসপি ২৩ হাজার ১০০, পরিদর্শক ২২ হাজার, সাব ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট/টিএসআই ১৬ হাজার, এএসআই/এটিএসআই ১১ হাজার, কনস্টেবল ৯ হাজার টাকা মূল বেতন পান। সংস্কার কমিশন এই বেতন কাঠামোয় পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারে। বাড়ানো হতে পারে রেশনের পরিমাণ ও মান। সংস্কারে পুলিশের মানবাধিকারও যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কমিশন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, পুলিশের প্রায় সব স্তরেই পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে। যা দেখা যেতে পারে পোশাকেও। প্রশাসনিক কাঠামো বা পদেও পরিবর্তন আনা হবে। থানা প্রধান বা ওসির দায়িত্বে একজন পরিদর্শক নাকি সহকারী পুলিশ সুপার থাকবেন সেটাও ভেবে দেখা হবে। অর্থাৎ পুলিশকে প্রকৃত অর্থেই জনগণের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যেসব পরিবর্তন আনা দরকার তা করার কথা ভাবা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।
পুলিশ প্রশাসনের সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সফর রাজ হোসেনকে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানিয়েছেন, সব পক্ষের মতামত নিয়ে পুলিশে সংস্কার আনা হবে। ব্রিটিশ আমলের আইন আর মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে কীভাবে জনবান্ধব পুলিশ হতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া হবে। জুলাই-আগস্টে পুলিশকে যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে ভবিষ্যতে যাতে আর কখনও এ-রকম না ঘটে তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন সফর রাজ হোসেন।
তিনি বলেন, ৩০/৩২ বছর চাকরি করেছি পুলিশের সঙ্গে। যেটুকু অভিজ্ঞতা আছে, চেষ্টা করব রিফর্মের মাধ্যমে যাতে জনকল্যাণমুখী হয় পুলিশ। স্টেক হোল্ডারসহ সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই সুপারিশ করব।
পুলিশ স্টাফ কলেজের অতিরিক্ত ডিআইজি সোহেল রানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এই সংস্থাকে জনবান্ধব করে তুলতে হলে নিয়োগ, পদায়ন, পুরস্কার ও শাস্তির একটি অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ পদ্ধতির বিধান রেখে প্রচলিত অনেক আইনের পরিবর্তন দরকার হবে। সবার আগে প্রচলিত সিস্টেম পাল্টাতে হবে। মনে রাখতে হবে, সিস্টেম আর আইনে পরিবর্তন আনলে, সমস্যার ৮০ শতাংশের এমনিতেই সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের সব পর্যায়ে নিয়োগে মূল্যায়ন পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে একজন মানবিক, ন্যায়পরায়ণ, সৎ, সেবার মানসিকতাসম্পন্ন ও মেধাবী কর্মকর্তাকে আলাদা করা যায়। পাশাপশি সব ধরনের তদবির ও সুপারিশকে ‘না’ বলার শক্ত মেকানিজম গড়ে তোলা আবশ্যক।
সোহেল রানা বলেন, পুলিশ কারও কাছ থেকে কিছু নিলে সংগত কারণেই তার প্রতি একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। তাই বৃহত্তর স্বার্থে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পুলিশের কোনো পর্যায়েই সরাসরি দান, অনুদান ও সুবিধা নেওয়া উচিত নয়। সংস্কারে এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে এখন সময় এসেছে উপযুক্ত মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে ইমেজ উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়ার। তথ্য লুকানোর কালচার থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ দিন শেষে তা পুলিশের ক্ষতিই ডেকে আনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক পুলিশ প্রধান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইন আর পুলিশ প্রবিধান বা কার্যবিধি অনেকটাই ব্রিটিশ ধাঁচের। ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও আমাদের প্রচলিত আইনের অনেক মিল রয়েছে। সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে শোনা যাচ্ছে জাপানের পুলিশ আইনকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। আমি মনে করি, কাদের অনুসরণ করা হবে সে বিষয়টা ভালোভাবে ভেবে দেখা দরকার। কারণ কোনোকিছুই এক ধাক্কায় পাল্টে ফেলা যায় না। তা ছাড়া ওই দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের মিল-অমিলকেও গুরুত্ব দিতে হবে। বরং সবার আগে দরকার আইনের সংশোধন। আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখে। যা তাদের মনোবল ও দক্ষতা কমিয়ে দেয়। এটা তাদের চরিত্রকেও প্রভাবিত করে। বিবেচনার বিষয় হলোÑ যেখানে দেশের আইন পুলিশকে বিশ্বাস করে না সেখানে জনগণ কি করে তাদের বিশ্বাস করতে পারে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে এর মডেল হওয়া উচিত নিজস্ব। অন্য দেশের পুলিশিং মডেল অনুসরণ না করে আমাদের দেশের অপরাধ, সংস্কৃতি ও সমাজের মানুষের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই পুলিশ বাহিনী গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যের অনুকরণে খুব একটা ভালো ফলাফল আসে না। আমাদের দেশের অপরাধগুলো কেমন, অপরাধীদের চরিত্র কেমন, কেন অপরাধ বাড়ছেÑ এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে সেগুলো দূর করার মতো যে উপযুক্ত চরিত্র বা মানসিকতার পুলিশ প্রয়োজন ঠিক সেভাবে পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
পুলিশের সংস্কারে যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে ড. তৌহিদুল হক বলেন, আমরা এখনও ব্রিটিশদের তৈরি করা আইনে আমাদের পুলিশকে চালাচ্ছি। এ আইনে পুলিশ রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ জনগণ কোনো সুবিধা পায় না। সুতরাং জনগণের পুলিশ হবেÑ এমন আইনের মাধ্যমে এই বাহিনীর সংস্কার করতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন অধীনস্থদের অন্যায় কোনো আদেশ দেবেন সেই আদেশের বিরোধিতা যাতে অধীনস্থরা করতে পারেন সেই সুযোগও থাকা প্রয়োজন।