মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর
ইসমাঈল হুসাইন ইমু
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বদলি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সকল সার্কেলের পরিদর্শকরা। দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিদর্শক একই সার্কেলে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই সরকার তাদের বদলির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ২২ পরিদর্শককে বদলির আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বদলির পাশাপাশি সার্কেলগুলোয় সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পরিদর্শকরা বলছেন, মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই আছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে একই সার্কেলে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের সিংহভাগই দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে একই সার্কেলে বহাল ছিলেন। এখনও তারা একই রকম ভূমিকা রাখছেন। এভাবে নানা কারণে অভিযুক্ত উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেদের রক্ষা করছেন। তাই শুধু পরিদর্শকদেরই ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। অথচ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক পরিদর্শক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, উচ্চপদের কর্মকর্তাদের বহাল রেখে শুধু পরিদর্শকদের বদলি করা হলে এ সেক্টরের বেহাল কাটবে না। দেখা যাচ্ছে, সাবেক সরকারের সময়ের সুবিধাভোগী পরিদর্শকদেরই ফের বদলি করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। যা সংস্থাটিকে ফের সমালোচনার মধ্যে ঠেলে দেবে।
বদলি হয়েই নেমেছেন মাসোহারা আদায়ে
এদিকে সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় যেসব চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিল, তাদের অনেককেই তালিকাভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া এলাকা চিহ্নিত করেও এ তালিকা করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মাদক নিরাময় কেন্দ্র, মাদক স্পট, ওয়্যারহাউস, এয়ারপোর্ট, বিভিন্ন বার এবং অননুমোদিত বারগুলো থেকে প্রতিটি সার্কেলের পরিদর্শকরা নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। এখন বদলি হওয়া পরিদর্শকরা কাজে যোগ দিয়েই ওসব স্পটে তাদের মাসোহারা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে পরিদর্শকদের বদলিকে ঘিরে পকেট ভারী করার বাণিজ্যে নেমেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা ধার্য করা হচ্ছে বদলি ঠেকানোর কাজে। তবে কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
আলোচনায় ১৩তম ব্যাচে নিয়োগপ্রাপ্তরা
এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর জারি এক বদলির আদেশ ঘিরে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এ-সংক্রান্ত আদেশে এক পরিদর্শককে যশোর পণ্যাগারে পোস্টিং দেওয়া হয়। অথচ এই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে; ঠিক একইভাবে যশোর পণ্যাগারও অবৈধ লেনদেনের হাট হিসেবে পরিচিত।
প্রজ্ঞাপনকৃত বদলি আদেশে প্রাইজ পোস্টিং পাওয়া পরিদর্শকদের বেশিরভাগই ১৩ ব্যাচে নিয়োগপ্রাপ্ত। একই ব্যাচ থেকে একসঙ্গে এতজনের পদায়ন নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
মাদক ব্যবসায় জড়িত গডফাদারদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু বাহক নয়, মাদকের সঙ্গে জড়িত বড় বড় গডফাদারদের ধরতে হবে। চলমান যৌথ অভিযানে এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং দৈনিক অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হবে। এ বিষয়ে সাফল্যের ওপর নির্ভর করে অধিদপ্তরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে।’ পাশাপাশি তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পরিদর্শকদের বদলি করা হয়েছে। মফস্বল এলাকা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে অনেককে। এর আগে কয়েকজন সহকারী পরিচালককে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু বদলি ঠেকাতে সাবেক সরকারের আমলের মতোই অনেকে তদবির করছেন।’
অভিযোগ রয়েছে, পরিদর্শকরা প্রধান কার্যালয়ের গুটিকয়েক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ‘দুষ্ট লোকেরা সবসময়ই তাদের কর্মকাণ্ড চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বদলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিন সদস্যের কমিটি রয়েছে এ বদলির প্রক্রিয়ায়।’
মাদক কারবারিদের তালিকা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অনিয়মের খবর পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’