সেমিনারে ড. শারমিন রুমি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৭ পিএম
পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মাছ খেলে শরীরে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। মাছ দুটিতে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে তা রান্না করলেও তার প্রভাব নষ্ট হয় না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্সের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আমিন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার প্রাক-অবহিতকরণ সেমিনারে নিজের গবেষণার ধারণাপত্রে এসব কথা বলেন তিনি। বুধবার রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএর নিজস্ব কার্যালয়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএফএসএর জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া, বক্তব্য রাখেন বিএফএসএর সাবেক পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা ও গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব।
ড. শারমিন রুমি আমিন বলেন, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে বাজারজাত করার ১৫ দিন আগে তা নিরসন করে আনতে হয়। তা ছাড়া কী পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে তার মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। তারপরও যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার হয় তাহলে তা মাছের শরীরে থেকে যায়। কতটুকু থাকে তা আমাদের গবেষণা করে দেখতে হবে।
ড. শারমিন রুমি আমিন বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ তথা নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ। এসব মাছ বাজার বা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করার সময় প্যাথেজনিক ব্যাকটেরিয়া আসে। এসব ব্যাকটেরিয়া মাছের মধ্যে থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া মাছে থাকলে আমরা অসুস্থ হবো কিন্তু কোন এন্টিবায়োটিক শরীরে কাজ করবে না। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
ফাস্ট ফুডের কারণে নারীদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে ও মা হওয়ার হার অনেকাংশে কমিয়ে দেয় বলে জানান,
ড. মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিটষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকান বেশি। সহজলভ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশই ফাস্ট ফুড খায়। তারমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাবার বেশি খায়। এসব তৈলাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে জিহ্বায় আলাদা আস্তরণ পড়ে যায়, স্বাদ কমে যায়। তখন অন্য খাবার ভালো লাগে না।
তিনি বলেন, ফাস্ট ফুডের কারণে শরীর মোটা হয়ে যায়। আর একবার মোটা হয়ে পড়লে পরবর্তীতে সেটা বেশি একটা কমানো যায় না। ফাস্ট ফুডের কারণে বিশেষ করে নারীদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তাতে মেয়েদের মা হওয়ার হার অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এই অবস্থা হলে আগামীদিনে বংশধারা ঠিক রাখা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে। এজন্য এসব খাবার এড়িয়ে মানসম্মন খাবার খেতে হবে।
পশু মোটা-তাজাকরণে স্টেরয়েড ড্রাগ ব্যবহার হচ্ছে বলে ড. মো. আব্দুল মাসুম বলেন, দেশে পশু মোটা-তাজাকরণে স্টেরয়েড ড্রাগ ব্যবহার হচ্ছে না বলা হলেও কিন্তু খামারিরা এটি ব্যবহার করছে। খামারিরা প্রথমে স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে তারা জানায় তারা হলুদ বা গোলাপী বড়ি নামে ব্যবহার করে। আর এসব ড্রাগ সীমান্ত এলাকায় বেশি ব্যবহার হয়। কেননা ভারত থেকে এগুলো সহজেই পাচার হয়ে দেশে আসে। তিনি বলেন, আমরা পশুর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে স্টেরয়েড ব্যবহারটা তুলে ধরবো। যাতে সহজেই এ ড্রাগ চিহ্নিত করা যায়।
জাকারিয়া বলেন, দেশে ৭০ ভাগ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগের কারণে। তারমধ্যে ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু রয়েছে ৪ নম্বরে। তাই আমাদের গবেষণার মাত্রা বাড়াতে হবে। বিএফএসএর গবেষণার সময়সীমা খুব কম। মাত্র এক বছর। এই সময়ে অনেক কিছু করা সম্ভবপর হয় না। তাই এই সময়সূচি পরিবর্তন করা দরকার। নতুন গবেষণা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।
মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে জানান, ড. মো. আহসান হাবীব। তিনি বলেন, বর্তমানে এর ব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তা নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ বলছেন পাহাড়ের নিচেও প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি অসনিসংকেত। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যগুলো নিয়ে গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে। সমাধান বের করতে হবে।
সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করাও একটি ইবাদত। ইতিপূর্বে দেশের নামকরা কোম্পানির ১৩টি দুধের স্যাম্পলের মধ্যে ১১টিতেই হেভি মেটার পাওয়া গিয়েছিল। এটি নিয়ে কাজ করার কারণে তা থেকে উত্তরণ হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে নতুন করে ১০টি গবেষণায় অর্থায়ন করা হচ্ছে। আশাকরি দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় এটি বড় অবদান রাখবে। স্ট্রিট ফুডগুলোতে নানা ধরনের রং ব্যবহার খাবারকে আকর্ষণ করে তোলা হয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. এসকে আরিফুল হক বলেন, স্কুলের সামনে বিক্রি হওয়া আচার, ফুসকাসহ শিশুরা যে ধরনের খাবার খায় সেসব থেকে ডায়েরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। সেজন্য শিশুদের খাদ্যের প্রতি বেশি খেয়াল রাখেতে হবে।
অমিতাভ মন্ডল বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে ৬০ কোটি লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করে বছরে বিশ্বের ৪০ শতাংশ শিশু রোগাকান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটে।
অনুষ্ঠানে ১০টি গবেষণার ধারণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্সের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আমিন, জিওলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুসান, সেন্টার ফর এডভান্সড রিচার্স সায়েন্সের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ড. এসকে আরিফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিমান মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্সের ড. মাহফুজা মোবারক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, নোয়াখালী সায়েন্স এন্ড টেকননোলজি ইউনিভার্সিটির ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি হিসটোলজি এন্ড ফাইসিওলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মাসুম, পথিকৃৎ ইনস্টিটিউট অব হেলথ স্টাডিজের চিফ রিচার্স এসোসিয়েট অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান নিজ নিজ গবেষণার বিষয় তুলে ধরেন।