প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২১ এএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২২ এএম
ছবি : সংগৃহীত
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যেহেতু পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রাজনৈতিক দলিল হিসেবে কাজ করে, এ সরকার নতুন করে বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যাবে না। তা ছাড়া পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় না, সে জন্যই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে।
এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক। চলতি অর্থবছরের শুরুতে আরেকটি একনেক সভা হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় সরকারের সব উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অনুমোদন পাওয়া চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আজকে বড় কোনো প্রকল্প অনুমোদন করিনি, বরং প্রক্রিয়াগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সংশোধন আসছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আমরা সংশোধন করছি। এতদিন প্রকল্প অনুমোদন হতো মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একনেক সভায় গিয়ে। পরে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক রাজনৈতিক মদদে তাদের মতো করে বাস্তবায়ন করত।’
বিভিন্ন দাতা সংস্থার এগিয়ে আসার কথা বলে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ ছাড়া এখন দাতা সংস্থাগুলো হাত খুলে সহায়তা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড যেমন বলেছে, তোমরা যেকোনো প্রকল্প নিয়ে আস আমরা সহায়তা দেব। এরকম অনেক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংস্থা সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিগত সময়ে একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই থেকেও বাদ দেওয়া হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে।’
চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। ফলে একনেকের গুরুত্বও কমবে। পাস হওয়া মানেই কাজ শেষ নয়। বাস্তবায়ন বড় কথা।’
যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্প থাকবে না জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্প খুব বেশি যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে পড়বে না। আগে পাস করা হবে, এরপরই কোনো সমস্যা থাকলে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যোজন- বিয়োজন করা যাবে।’
প্রকল্পের পাইপলাইনে থাকা বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাজেট সহায়তায় আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। মৃতপ্রায় ও হিমাগারে থাকা প্রকল্পগুলো আমরা যদি ছেড়ে দিই, তাহলে বিশ্বব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা ছাড় করতে পারবে। যেসব প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন আছে সেগুলোতে সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে, ফলে অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মেলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের জন্য গ্যাস কূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য না। সেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগেরগুলো দেওয়া হয়েছিল বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি।’
তিনি বলেন, ‘এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া হবে।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত অর্থ কেন ব্যয় হলো- সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়।’