প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২০ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ফটো
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। দুই দিনের এই সফরে দলটির সদস্যরা আজ রবিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে প্রতিনিধিদলটির।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের এই সফর বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। গতকাল শনিবার বিকালে দিল্লি হয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছেন তিনি। তবে তার আগেই সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের প্রধান রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান।
ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত ডোনাল্ড লু
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এটা ডোনাল্ড লুর প্রথম সফর হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকবার সফর করেছেন তিনি। ওই সময় তার সফরের আগে-পরের সময়টা ঢাকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ছিল ‘লু হাওয়া’ প্রবাহিত হওয়ার সময় হিসেবে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে সোচ্চার থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া ডোলান্ড লুর এবারের সফর অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটির এই সফর হবে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করে তোলার। বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সহায়তার দিকগুলো নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় এসেছে দলটি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন এ প্রতিনিধিদলে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে আরও রয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড।
কী পেতে পারে বাংলাদেশ
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক এম হুমায়ুন কবিরের মতে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সহায়তা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরত যেতে সরকারের পদক্ষেপে ওয়াশিংটনের সহায়তা চাওয়ার সুযোগ হবে এ সফর থেকে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি এখন। এটা থেকে উত্তরণে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সমর্থন প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র বলতে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবির কাছে আমরা ৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছি, সেটি পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেটা আমাদের খাদে পড়া অর্থনীতিকে তুলে আনতে সহায়তা করবে।’
প্রতিনিধিদলের কর্মসূচি
সফরসূচি অনুসারে, নয়াদিল্লি সফর শেষে গতকাল শনিবার ঢাকা পৌঁছেছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। আজ রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন ছাড়াও অন্যান্য উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রতিনিধিদলকে উদ্বেগের কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা
এদিকে গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে প্রতিনিধিদলটির সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশের শিল্পকারখানার চলমান অস্থিরতাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের উদ্বিগ্নের কথা তুলে ধরেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক ধারার ফিরিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে মত দিয়েছেন দলটির সদস্যরা। বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির দেশীয় প্রধানরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির অর্থ বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ও সরকারের কাছে পাওনা অর্থের বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতের কোম্পানি শেভরন, বীমা কোম্পানি মেটলাইফ, প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট, কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা, বহুজাতিক আর্থিক কোম্পানি সিটি ব্যাংক এনএ, মাস্টারকার্ড, জেনারেল ইলেকট্রনিকস বা জিইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রধানরা এ বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নিয়েছেনÑ এমন একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে কার্যরত মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ সময় তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে ব্যবসায়ীদের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।