আলাউদ্দিন আরিফ
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৪৪ এএম
ফাইল ফটো
পুলিশের সাবেক আইজি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যায়ের মোট ৯৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২৭৮টি মামলা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বাধিক ৩৮টি মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবীবুর রহমানের বিরুদ্ধে হয়েছে ৩৩ মামলা। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে হয়েছে ৩৬টি মামলা। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। উপপরিদর্শক বা এসআইদের মধ্যে ডিবির এসআই অমিতাভ দর্জির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার প্রায় সবই ৫ আগস্ট ও তার আগে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলা। গতকাল ডিএমপি থেকে এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি ৩ জন, অতিরিক্ত আইজি ৮ জন, ডিআইজি ৭ জন, উপকমিশনার বা পুলিশ সুপার ১২ জন, অতিরিক্ত উপকমিশনার ১৪ জন, সহকারী কমিশনার ৬ জন, ওসি ১২ জন, পরিদর্শক ৮ জন, উপপরিদর্শক ১০ জন, সহকারী উপপরিদর্শক একজন ও কনস্টেবল ৩ জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হকের বিরুদ্ধে করা হয়েছে ৭টি মামলা। অপর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হয়েছে একটি মামলা। ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে হয়েছে একটি মামলা। এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকায় হয়েছে ১১টি মামলা। সিআইডির মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে হয়েছে ২টি মামলা। র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যরিস্টার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৫টি। পুলিশ সদর দপ্তরের বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত আইজি লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে একটি। পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত আইজি জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে একটি। ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২টি, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১টি, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২টি, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৩টি, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার ও খালিদ হাসানের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে একটি, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে।
ডিএমপির প্রসিকিউশন শাখার উপকমিশনার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি রাশিদুল হক, ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় ও রমনার সাবেক উপকমিশনার মো. আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর সালিহীন ইমনের বিরুদ্ধে একটি, ডিবির লালবাগ বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি, ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ ও মাহফুজুল আলম রাসেলের বিরুদ্ধে একটি করে, উত্তরার ডিসি আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে দুটি, তেজগাঁওয়ের ডিসি হাফিজ আল ফারুক, এইচএম আজিমুল হক ও মাহবুব উজ জামান ও লালবাগের সাবেক ডিসি জাফর হোসেনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া ওয়ারী জোনের এডিসি নুরুল আলম, সবুজবাগের গোবিন্দ চন্দ্র, ডিবির শাহেন শাহ মাহফুজ, হাফিজ আল আসাদ, মহিত কবির সেরনিয়াবাত, লালবাগের শহিদুল ইসলাম, ডিবির জুয়েল রানা, হাসান আরাফাত, নাজমুল ইসলাম, সাব্বির রহমানের বিরুদ্ধে একটি করে, ডিবির এডিসি আফজাল হোসেন টুটুলের বিরুদ্ধে দুটি, এডিসি ফজলে এলাহী, রওশানুল হক সৈকত, শাকিল মোহাম্মদ শামীম, রেফাতুল ইসলাম রিফাতের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সহকারী পুলিশ কমিশনার শহীনুর রহমান, এসি প্যাট্রোল শহিদুল হক, এসি মিজানুর রহমান এবং যাত্রাবাড়ীর এসি তানজিল আহমেদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। মতিঝিলের সাবেক এসি গোলাম রূহানীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দুটি।
ওসিদের মধ্যে নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি শাহিনুর রহমান শাহিনের বিরুদ্ধে একটি, রমনা সাবেক ওসি খন্দকার হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চারটি, আদাবরের সাবেক ওসি মাহবুবুর রহমান, যাত্রাবাড়ীর সাবেক ওসি বিএম ফরমান আলী, মোহাম্মদপুরের সাবেক ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, রূপনগর থানার সাবেক ওসি সিকদার শামীম হোসেন, দারুস সালাম থানার সাবেক ওসি সেলিমুজ্জামান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম, মুগদার সাবেক ওসি প্রলয় কুমার সাহার বিরুদ্ধে একটি করে ও রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।
পরিদর্শকদের মধ্যে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক অপারেশন নাজমুল হাসান, ডিএসবির পরিদর্শক রণজিৎ রায়, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক তদন্ত মেহেদী হাসান ও বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফাহায়াত উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে একটি, পরিদর্শক তদন্ত রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। সিটিটিসির ইন্সপেক্টর আবুল বাশারের বিরুদ্ধে দুটি, কোতোয়ালি থানার এসআই শাহাবুদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে একটি, শাহবাগ থানার এসআই সাদাত আলী ও রামপুরা থানার এসআই কাউসার আহমেদ খানের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। গুলশান থানার এসআই মামুনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিনটি।
ডিএমপির এসআই নুরে আলম মিয়া, মাসুম বিল্লাহ, রশিদ আকবর রাজীব সরকারের বিরুদ্ধে একটি করে ও শাহবাগ থানার আশরাফুল শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে দুটি। রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে একটি।
এ ছাড়া ডিএমপির কোতোয়ালি থানার কনস্টেবল মাহবুব আলম, আব্দুর রশিদ ও রমজান মোল্লার বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার ফারুক হোসেন জানান, এসব মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ৫ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। তিনি আত্মসমর্পণের ইচ্ছা জানালে তাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া একেএম শহীদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উত্তরা এলাকা থেকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।