প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭ এএম
কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ফটো
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। কেন এবং কী কারণে তারা পদত্যাগ করছেন, সে বিষয়গুলো জানাতে আজ দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। বক্তব্যের খসড়াও প্রস্তুত। কাজী হাবিবুল আউয়াল এটি প্রস্তুত করে গত মঙ্গলবারই অন্য কমিশনারদের দেখিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়ে সব কমিশনার একমত হননি বলে জানা গেছে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে চারজন কমিশনারের মধ্যে তিনজন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে পদত্যাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এ বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন। বিকালে অফিস ছাড়ার সময় সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কাল (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু জানানো হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলম গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘সৌজন্য বিনিময়’ করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের কারণ জানানোর উদ্যোগে আমার মত নেই। মঙ্গলবার সিইসির সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের বৈঠক হয়। সংবাদ সম্মেলনে পড়ার জন্য কমিশনের পক্ষে সিইসি তার বক্তব্যের একটি খসড়া তৈরি করেছেন। সেটা আমাদের দেখিয়ে মতামত চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখা দেওয়ার দরকার নেই। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে থাকার ইচ্ছা আমার নেই।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমি নির্বাচন ভবনে যাব। নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে আসব।
এদিকে সিইসি ও অন্য কমিশনাররা কীভাবে কার কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছাড়ার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগÑ এসব ঘটনাক্রমে নির্বাচন কমিশনাররা তাদের পরিণতি সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যান। অফিসেও নিয়মিত ছিলেন না তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে কমিশন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি সাক্ষাতের সময় দিলেও পরে তা বাতিল করা হয়।
এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘বিপ্লব ও ফরমান : সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে গত ২৪ আগস্ট সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ লেখেন। এ লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছেন।
এখন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবের’ পর নির্বাচন কমিশন কীভাবে সংকটে পড়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাবিবুল আউয়াল লেখেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয়তো অচিরেই বিগত হবে। কিন্তু এতে করে সংকটের নিরসন হবে না। সংসদ অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ভেঙে দিতে হয়েছে।’
এ ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। গতকাল একই দাবিতে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়। এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গতকাল বলেন, জনগণের রোষ থেকে বাঁচার জন্য এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিত।
অনেকে এ নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেয়নি
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ইসিতে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল এ নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেয়নি। ইসির সংলাপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছিল দলগুলো। বিতর্কিত এ কমিশনের পরিচালনায় ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। এ ছাড়া গত আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক পদে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন, উপনির্বাচন করলেও সেসব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়া, বিতর্কিত বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অনুমোদন দেওয়া, আইনে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দেওয়া, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মত পাল্টানোসহ কমিশনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব বিতর্ককে আমলে না নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বিষয়টিকে রাজনৈতিক সংকট বলে আখ্যায়িত করেন।