প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৮:০৭ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৯:১৭ পিএম
বন্যাকবলিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউরায় কলার ভেলায় করে পার হচ্ছে শিশুরা। ছবি : ফোকাস বাংলা
বিগত তিন দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় প্লাবিত ও ব্যাপকভাকে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জেলায় ২০ লাখের বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতিসংঘের শিশু তহবিল—ইউনিসেফ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলো উপচে পড়ছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত ৫২ (শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ৫৪) জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মাথা গোঁজার একটু আশ্রয় খুঁজছে; বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, মাঠ-ঘাট আর ক্ষেত। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, তাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি কোনো ত্রাণসামগ্রী। সরকারি লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার-অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ প্রাথমিক যাচাইপর্ব চালায়। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ ৩ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এসব মানুষের মধ্যে তারা জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ যেমন, ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরি-ক্যান এবং দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুখে খাবার স্যালাইন) এর ব্যাগ বিতরণ করেছে।
কিন্তু এসবের বাইরেও আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুখে খাবার স্যালাইন) এবং জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজন। অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পানরে তার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিশুদের জীবনে প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, ‘বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। এই অবস্থায় বেশি দেরি হওয়ার আগেই শিশুদের জন্য বৈশ্বিক নেতাদের জরুরিভাবে কাজ করার এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।