× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অভাব এখন বিশুদ্ধ পানির, বাড়ছে সংকট

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১১:০৯ এএম

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১১:১০ এএম

ভয়াবহ বন্যায় এখনও পানিতে ডুবে আছে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা। ছবিটি বৃহস্পতিবার বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকা থেকো তোলা। প্রবা ফটো

ভয়াবহ বন্যায় এখনও পানিতে ডুবে আছে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা। ছবিটি বৃহস্পতিবার বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকা থেকো তোলা। প্রবা ফটো

পানি কমতে থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে নানা সংকট। এ ছাড়া দুর্গত স্থানগুলোয় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। আছে রান্না করা খাবারের সংকট। এদিকে ফেনী জেলায় বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। জেলা মৎস্য ও কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, এ দুই খাতে ফেনীতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। 

এ ছাড়া চলমান বন্যায় দুর্গত ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। সিলেট জেলাসহ দেশের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। 

বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। পানিবন্দি রয়েছে ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার। মৃতের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে পুরুষ ৩৯, মহিলা ৬ ও শিশু ৭ জন। যার মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৭, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারে ৩ ও মৌলভীবাজারে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৬৮ উপজেলার প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৮৯২টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোয় ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ ব্যক্তি ও ৩৬ হাজার ৪৪৮ গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ৫৯৫টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট ১ লাখ ৪ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

ফেনী প্রতিবেদক জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পানি কমার সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষত। বন্যায় ফেনী জেলায় মৎস্য ও কৃষি খাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। 

সরেজমিন দেখা গেছে, পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে হলুদ, আদা, আউশ, আমন ও শীতকালীন আগাম বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় স্মরণকালের বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধু কৃষিতেই ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এতে দুই লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে বন্যায় জেলার অধিকাংশ পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য খাতে রেণু, পোনা, বড় মাছ ও পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতিসাধিত হয়েছে। জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, কয়েকদিনে জেলার ছয়টি উপজেলায় বন্যায় মাছচাষিদের ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ-সংশ্লিট অন্তত ২০ হাজার মানুষ। বন্যায় ভেসে গেছে ১৮ হাজার ৭৬০টি পুকুর-দিঘি। এসব পুকুর থেকে ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বড় মাছ এবং ১৯৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়া জেলায় খামারিদের ৫৪ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, মৎস্য খাতে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরও সময় লাগবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এ ছাড়া ফেনীর সোনাগাজীর মুহুরী নদী থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় কাফনের কাপড় পরানো অজ্ঞাতপরিচয় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বন্যার কারণে দাফনের জায়গা না পেয়ে স্বজনরা হয়তো লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন। রাতেই জানাজা শেষে মরদেহটি দাফন করা হয়। এদিকে ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত জেলায় বন্যার পানিতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিবেদক জানান, বন্যাপ্লাবিত উপজেলার নবাবপুর, আমিরাবাদ, মজলিশপুর, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের কিছু কিছু গ্রামে এখনও পানি। এসব এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি কমেনি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আবার অনেক স্থানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে দুর্গতরা। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু কিছু এলাকায় একাধিকবার ত্রাণসহায়তা পেলেও গ্রামের দিকের অনেক এলাকায় একবারও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। 

লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক জানান, জেলায় প্রায় ৭ দিন ধরে বন্যার পানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। এতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণের মাধ্যমে সংকট দূর হচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানি সংকটে ভুগছে বন্যাকবলিত মানুষজন। পানি কমতে শুরু করলেও দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে বন্যার্তরা। বিভিন্ন উপজেলায় এখনও কয়েক ফুট পানির নিচে ডুবে থাকায় নলকূপ থেকে ময়লা পানি উঠছে, ফলে এসব স্থানে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। 

কমলনগর-রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক জানান, এ দুই উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এভাবে কমলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে পানি কমলেও স্বস্তিতে নেই এলাকার মানুষজন। কয়েকদিনে সড়কের অবকাঠামো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বন্যাপরবর্তী বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছে দুর্গত এলাকার মানুষ। পানিবন্দি দিন কাটালেও এখনও অনেকে ত্রাণসহায়তা পাননি বলে অভিযোগ আছে তাদের।

নোয়াখালী প্রতিবেদক জানান, জেলার বন্যাকবলিত উপজেলায় ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। সূর্যের দেখা পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্য-ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগী। 

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি ত্রাণ প্রতিদিনই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী আনা হলেও তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে নিজেদের মতো করে বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। এতে সমন্বয় ঠিকভাবে হচ্ছে না।

টাঙ্গাইল প্রতিবেদক জানান, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহে টাঙ্গাইলের ‘সরকারি সা'দত কলেজের উদ্যোগে চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়। গতকাল বিকালে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কনসার্টটি শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা