প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ০৯:০৭ এএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৩৩ এএম
সর্বগ্রাসী বন্যায় অকল্পনীয় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। প্রবা ফটো
দেশের ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলায় সর্বগ্রাসী বন্যায় অকল্পনীয় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। সর্বত্রই চলছে হাহাকার। চলমান বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষের সংখ্যা ৪৮ লাখের বেশি। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার। তিন হাজার ১৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ, তাদের সঙ্গে রয়েছে ১৮ হাজার গবাদিপশু। গত দুই দিনে প্রাণহানি ঘটেছে ১৫ জনের ।
শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলেই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে জানা গেছে। ১১ জেলার বাইরে মোংলা ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে বিপদসীমার চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে উপকূল। এর প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনেও।
এদিকে বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি কিছুটা কমলেও বন্যার্তদের দুর্ভোগ কবে নাগাদ শেষ হবে, এই ক্ষতি তারা কবে নাগাদ কাটিয়ে উঠতে পারবে তা অনিশ্চিত। ফেনী-কুমিল্লা-চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি আজ শনিবার উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। বানভাসি অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বিদ্যুৎহীন ফেনীর সব সড়ক প্লাবিত। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও প্রায় অচল। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারি পর্যায়ের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসছেন। গত বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, রেড ক্রিসেন্ট সবাই বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ত্রাণ তৎপরতায় যুক্ত হয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে সেনাবাহিনীর সব সদস্য তাদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বাসসকে বলেন, ‘অনেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকার তাদের এই মহতী আগ্রহকে স্বাগত জানায়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতিতে গত বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলেছে। এই গণত্রাণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর-রিকশাচালকসহ নানা বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গতকালও হাজির হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। একের পর এক প্রাইভেট কার, ট্রাক, ঠেলাগাড়িতে করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এত শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনমেলা বহু বছর দেখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গণত্রাণ কর্মসূচিতে কাজ করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিজেদের পরিচয়ের বিভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে এটা খুবই ইতিবাচক। এটা যেন সামনের দিনেও থাকে এবং আরও যেন মানুষকে সংঘবদ্ধ করা যায় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব।’
বন্যায় মৃত ১৫ জন, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ লাখ মানুষ
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জানান, এই মুহূর্তে দেশে ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। জেলাগুলো হলোÑ ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এই জেলাগুলোয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এ মুহূর্তে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি। আর এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছে।
কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বন্যায় মৃতের সংখ্যা দুই নারীসহ ১৫ জন। এদের মধ্যে কুমিল্লায় চার, কক্সবাজারে তিন, চট্টগ্রামে চার, ফেনীতে এক, নোয়াখালীতে এক, লক্ষ্মীপুরে এক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের তথ্য উল্লেখ করে সচিব কামরুল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। দুর্গতদের সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় নগদ তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল এবং ১৫ হাজার খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করেছে। চলমান দুর্যোগ মোকাবিলায় সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন সচিব।
স্থানীয় প্রতিবেদকদের পাঠানো খবরে বন্যার্ত এলাকার পরিস্থিতি
মৌলভীবাজারের মনু নদী (রেলওয়ে ব্রিজ) এলাকা ও ধলাই নদী (রেলওয়ে ব্রিজ) এলাকা ছাড়া বাকি সবগুলো নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও কিছু কমতে শুরু করেছে পানি। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। জেলার ৬ উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে। এ জেলার রাজনগর উপজেলার মেদিনীমহল গ্রামের ছানাওর মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৩) গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যান। গতকাল বিকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ ৮ দিন পর গতকাল রোদের দেখা মেলে। মেঘনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ। রামগতি উপজেলার চরগাজী, চররমিজ, চরআলগী, চরপোড়াগাছা এবং চরবাদাম ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরপোড়াগাছা ও চরবাদাম ইউনিয়ন পুরোটা পানিতে ডুবে আছে । কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ ও হাজিরহাট ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামেরও একই অবস্থা। যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। এসব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধের ঢালে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। সরেজমিনে দেখা গেছেÑ এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি উঠেছে। বন্যায় আমন বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পুকুর, ডোবা-নালা, পথঘাট, রাস্তাসহ সবকিছুই পানিতে তলিয়ে আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়াতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। ফলে নতুন করে আর কোনো গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়নি। গতকাল সকালে সরেজমিনে উপজেলার খলাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাওড়া নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত পানিবন্দি অবস্থায় আছে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। চুলা ডু্বে যাওয়ায় রান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে তিন দিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মারা যান দুজন, বুধবার মারা যান তিনজন, সোমবার মারা গেছেন একজন। তিনজন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে, একজনের মাথায় গাছ পড়ে, দুজন পানিতে ডুবে মারা যান।
কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রাম সংলগ্ন প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি দ্রুত পার্শ্ববর্তী পীরযাত্রাপুর, বুড়িচং সদর, বাকশীমুল, রাজাপুর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এ সময় অনেক মানুষ স্থানীয় কলেজ-স্কুল-মাদ্রাসাসহ উঁচু ভবনগুলোতে আশ্রয় নেয়। গতকাল বিকালে দেখা যায় আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কমপক্ষে অর্ধসহস্রাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এ সময় তাদের মাঝে বিভিন্ন বাহিনী ও সংগঠনের পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পানি বেড়ে গিয়ে সেতুর পাটাতনের থেকে ৬ ইঞ্চির উপরে পানি উঠে যায়। ফলে গতকাল সকাল থেকে সেতুর ওপর দিয়ে পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ। বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে টিকিটও।
মোংলা ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার থেকে বিপদসীমার চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে উপকূল। নদ- নদীর পানি বৃদ্ধির এই প্রভাবে তলিয়ে গেছে বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনও। বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক জানান, পূর্ণিমা, অতি বৃষ্টি ও সাগর উত্তাল থাকার কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে মোংলা ও পশুর নদীতে। এই দুই নদীর পানি বিপদসীমার চার ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে মোংলার উপকূলের নিম্নাঞ্চল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা সমন্বয় সেল গঠন
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেল’ গঠন করা হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. হারুন-অর-রশিদ সেলের দৈনন্দিন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেলে জরুরি যোগাযোগের জন্য ০২-৪৭১১৮৭০০, ০২-৪৭১১৮৭০১, ০২-৪৭১১৮৭০২, ০২-৪৭১১৮৭০৩, ০২-৪৭১১৮৭০৪ ও ০২-৪৭১১৮৭০৫ এবং ০১৩১৭৭৪৯৯৮০ ও ০১৮২০১১৭৭৪৪ নম্বরে ফোন করা যাবে। সমন্বয় সেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রাপ্ত তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে এবং সার্বক্ষণিক সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর (ফলোআপ) রাখবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
৭ নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে
দেশের সাত নদীর ১৪ স্টেশনের পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে বেশিরভাগ অঞ্চলের নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। কিছু এলাকার নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। আর ভারী বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল জানায়, আজও দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি এবং চট্টগ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল আরও জানায়, ফেনী নদীর রামগড় স্টেশনের পানি ২০০ ও খোয়াই নদীর বাল্লা স্টেশনে পানি বিপদসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই নদীর হবিগঞ্জ স্টেশনে পানি ১৬৫, গোমতীর নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ১১৮, মনু নদীর মৌলভীবাজার স্টেশনে পানি ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সব মিলিয়ে কুশিয়ারা নদীর ৪ স্টেশন, মনু নদীর ২ স্টেশন, খোয়াই নদীর ২, গোমতী নদীর ২, হালদার ২, মুহুরী ও ফেনী নদীর দুই স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপরে আছে এখনও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
(প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)