প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪ ২২:১০ পিএম
সাকিব আল হাসান এবং ফেরদৌস আহমেদ। ছবি : কোলাজ, প্রবা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গার্মেন্টসকর্মী রুবেল নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলাটি করেন রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম।
মামলার আসামি হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের নামও রয়েছে। মামলায় সাকিব আল হাসাকে ২৮ নম্বর এবং ফেরদৌস আহমেদকে ৫৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শেখ রেহানা, সাবেক মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হক পাপন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, নজিবুল বশর মাইজাভান্ডারী, দিলীপ বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন-উর-রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০-৫০০ জনকে।
আসামির তালিকায় সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ ও মৎসজীবী লীগের নাম রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী রুবেল আদাবরের রিং রোডে প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেয়। এ সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, সাহায্য, সহযোগিতা ও প্রত্যক্ষ মদদে মিছিলে গুলি ছোঁড়া হয়। এতে বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয় রুবেল। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চালকালীন বিভিন্ন সময়ে ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ গণহত্যার শিকার হন। পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে নিহতদের পরিবারে পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাই আসামি হচ্ছেন। তবে ‘প্রথমবারের’ মতো কোন হত্যা মামলায় আসামি হলেন ক্রিকেটার সাকিব ও নায়ক ফেরদৌস। আগের কোন মামলায় আওয়ামী লীগের এ দুই সাবেক সংসদ সদস্য আসামি হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। চলচ্চিত্রের এ অভিনেতাকে (ফেরদৌস) ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সাকিব আল হাসানও মাগুরা-১ আসন থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরমেটে সাকিব আল হাসান অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান বাংলাদেশের মধ্যে টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থান করছেন। তিনি যখন মাঠে তখন হত্যা মামলায় আসামি হলেন।
এছাড়া মামলার আসামি হয়েছেন আরেক আলোচিত ব্যক্তি হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বাতিলের পর ফেসবুকে তিনি ভিডিও বার্তা দিলেও বর্তমানে কোথায় আছেন এ বিষয়ে কিছু জানাননি।
সামাজিকমাধ্যমে লাইভে দেশের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা তথ্য তুলে ধরে, জনস্বার্থে হাইকোর্টে অনেক রিট করে, দুদকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করে আলোচনায় আসেন সুমন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সংসদ অধিবেশনে বক্তব্যের মাধ্যমেও ঝড় তোলেন তিনি। তবে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে কিছুটা সমালোচনায় পড়েন সুমন। সরকার পতনের আগেই তিনি দেশ ছাড়েন বলে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।