× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুর্নীতিবাজ দণ্ডপ্রাপ্তরা ডিসি ফিটলিস্টে

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৩৬ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নির্বাচিত ৪৫ কর্মকর্তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। চাকরিরত অবস্থায় নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়া ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যাচভিত্তিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতিজনিত এসব মামলার কারণেই তারা পদোন্নতি পাননি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর এসব কর্মকর্তা সুযোগ বুঝে নিজেদের পদ-বঞ্চিত দাবি করে একদিকে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন; অন্যদিকে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পথ নিশ্চিত করে ফেলেছেন। এ ঘটনায় সৎ, চৌকস ও সত্যিকারের পদবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় ডিসির পদটি খুবই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে দেওয়া হলে সরকারের সুশাসন নিশ্চিত হবে না। বরং দুর্নীতি-অনিয়মের ধারাবাহিকতাই অব্যাহত থাকবে। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে প্রশাসনে এক ধরনের সুবিধাভোগী আমলাচক্র গড়ে উঠেছিল। তাদের বলয়ের বাইরে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়নি। এমনকি জেলা প্রশাসক থেকে উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি এবং সচিব করার ক্ষেত্রেও এই শক্ত চক্রটি ক্রিয়াশীল ছিল। এ কারণে হাইব্রিড ও আশীর্বাদপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই হয়ে উঠেছিলেন প্রশাসনের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। চৌকস, সৎ ও কর্মদক্ষ কর্মকর্তারা রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদে পৌঁছতে পারতেন না। মেধার স্বাক্ষর রাখার পরও বেশকিছু জেলার কর্মকর্তাকে সচিব করা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা ও বগুড়া জেলার কর্মকর্তারা ছিলেন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর দুর্নীতির কারণে কোণঠাসা কর্মকর্তারা সুযোগ বুঝে সামনে চলে এসেছেন। নিজেদের দাপ্তরিক দায়িত্ব ফেলে তারা নিজেদের গায়ে ‘বঞ্চিত’ ট্যাগ লাগিয়ে জনপ্রশাসন ও সচিবালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তারা যুগ্ম সচিব পর্যন্ত পদোন্নতির বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। এখন প্রক্রিয়া চলছে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির। এদিকে এরই মধ্যে ২৫ জেলা প্রশাসক প্রত্যাহার করেছে সরকার। দুয়েক দিনের মধ্যে এসব জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হবে।

এদিকে কথিত পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ৪৫ জনের ডিসি ফিটলিস্ট তালিকা করা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তাদের মৌখিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। অথচ মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। তাদের ডিসির ফিটলিস্টে রাখলে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা।

ডিসি ফিটলিস্টে থাকা ৪৫ কর্মকর্তার মধ্যে ক্রমিক নং ১, ১০, ১৪, ৪১ ও ৪২-এর বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। এদের একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (পরিচিতি নং-১৫৫২০)। এই কর্মকর্তা চাকরিজীবনের শুরুতেই জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। ঢাকার সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) থাকার সময় ঘুষ ছাড়া সেবা না দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ডিসি ফিটলিস্টের ক্রমিক ১০-এ থাকা টিটন খীসার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা তথ্য গোপন করে প্রথমে বাগিয়ে নেন উপসচিব পদে পদোন্নতি। এর ফলে ডিসির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে আর বেগ পেতে হয়নি তাকে। একসময় টিটন খীসা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২৪ বিসিএস-এ প্রশাসনিক ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জে বালু ইজারা-সংক্রান্ত এক উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারধরের অপরাধে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্তে টিটন খীসার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এরপর টিটন খীসা আদালতে যান এবং বেকসুর খালাস পান। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পাল্টা আপিল করে, যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি বিধায় তার পদোন্নতিও জোটেনি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য খুলে গেছে টিটন খীসার। 

ডিসির ফিটলিস্টের ক্রমিক ১৪-তে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের নির্বাহী বাদল চন্দ্র হালদার (১৫৮৪২)। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগÑ ভূমি-সংক্রান্ত সেবার নামে সার্ভেয়ারদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি করতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের জরিপকারক (সার্ভেয়ার) তাইয়ুবুর রহমান মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে জমি-সংক্রান্ত কাজ করে দিতেন। পাথরঘাটার এই ভূমি কার্যালয়ে ২০১১ সালের ১ জুলাই তাইয়ুবুর যোগ দেন। সম্প্রতি বদলি হওয়া পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাদল চন্দ্র হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে তাইয়ুবুরও ঘুষের বিনিময়ে জমি-সংক্রান্ত কাজ করার পথ বেছে নেন। 

শাশুড়ির নামে সরকারি জমি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সচিব মো. আফাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে, তার পরিচিতি নং-১৬২০১। বাগেরহাট জেলা পরিষদের সচিব ঝুমুর বালার (পরিচিতি নং-১৬২৩৯) বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুদক মামলাও হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ডিসি ফিটলিস্টে বিবেচনায় আনা নিন্দনীয়। বাছাই প্রক্রিয়ায় যারা আছেন, তাদের সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে সৎ ও কর্মঠদের পদায়ন করা উচিত।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা