স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ২৩:০৪ পিএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ২৩:০৭ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা। ছবি: সংগৃহীত
দেড় দশক আগে ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নতুন করে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর হাতে থাকা তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী রাওয়া ক্লাবের স্কাইলাইন রেস্টুরেন্টে পিলখানায় শহীদ ৫৭ অফিসার ও ১৭ সাধারণ নাগরিকের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এ সময় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আমি নাটক সাজানোর নামে রহস্যশালা আর চাই না।
রাকিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। আমরা সেসব দেশ প্রেমিক অফিসারদের অবদান ভুলব না। আমরা চাই, নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা অফিসারদের পরিবারকে যেন যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা শহীদ পরিবার মনে করি- যেসব নির্দোষ, দেশপ্রেমিক বিডিআর সৈনিক জেল খাটছেন, সুষ্ঠু তদন্তে যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।’
নিহত মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে বলেন, গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ট্রায়াল বা তদন্তকে আমরা মানি না। কারণ প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কী তার নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করলো, ডাল-ভাতের কথা বলল।
রাকিন আহমেদ আরও বলেন, এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন- ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই- যেখানে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে। ওই দিনটিকে আমরা শহীদ সেনা দিবস দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের স্ত্রী লবী রহমান ও ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, দুটো তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা খুব করে অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা চাই। কারণ আমরা খুব কাটছাঁট অংশ গণমাধ্যমে জেনেছি। আমরা পুরোটা দেখতে চাই। তাতে আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো। আর উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা চার্জ করতে পারব।
গত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তাদের দায়ী করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি তো সরাসরি দায়ী করতে পারি না। আমরা তো অনেক নাম শুনি। আপনারাও শোনেন। কিন্তু সেই নামগুলো আমরা তখনই বলতে পারবো যদি তদন্তের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসে। এমনি এমনি নাম বলে দেওয়া যায় না।
ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনি কী পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মনে করি ষড়যন্ত্রকারী আছে। ইন্টারন্যাশনাল কন্সপিরেসি আছে কি না সেটা তো তদন্ত কমিশন বসলে ভালো করে জানতে পারবো। তবে আমরা যদি আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারি, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো। কিন্তু রাষ্ট্রই যদি ইন্টারন্যাশনাল কন্সপিরেসি করে থাকে তাহলে তো পুরো রাষ্ট্রকে বিচারের আওতায় আনতে পারবো না।
এর আগে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে আগের যে সমস্ত তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের রিপোর্ট পাবলিক করতে হবে। হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিনজন জজ যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, অবিলম্বে সেই তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
গ্যাজেটে শাহাদাতবরণকারী সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেনা ও শোক দিবসকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। পিলখানা ট্রাজেডিকে স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে, কী ছিল এই শহীদদের ত্যাগ। যে সব সেনা কর্মকর্তা এ ঘটনাকে ঘিরে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ কম্পেন্সেশন প্রদান করতে হবে। নির্দোষ কোনো বিডিআর সদস্যকে যেন কোনভাবেই সাজা না দেওয়া হয়।