× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তাকসিম এ খান লাপাত্তা, সরিয়েছেন অনেক নথি

কাজী হাফিজ

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ০৯:২০ এএম

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ০৯:২১ এএম

তাকসিম এ খান। ফাইল ফটো

তাকসিম এ খান। ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার দিন থেকেই নিজ দপ্তরে অনুপস্থিত ঢাকা ওয়াসার ব্যাপক আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে ওয়াসার এমডির দায়িত্বে থেকে এ প্রতিষ্ঠানকে নিজের মাফিয়া সাম্রাজ্যে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট তাকে ওয়াসা ভবনে দেখা যায়। ওই দিন তিনি ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আলী জাবেদের গাড়িতে করে দপ্তর ছাড়েন। এরপর তিনি আর ওয়াসা ভবনে আসেননি। অভিযোগ উঠেছে, ইতোমধ্যে তিনি ওয়াসা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি সরিয়ে নিয়েছেন। 

ডা. আলী জাবেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এমডি নিজের গাড়ি ব্যবহার করেননি। আমি আমার গাড়িতে করে তাকে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের কাছে তার বাড়িতে পৌঁছে দিই। ৮ আগস্টের অনলাইন মিটিংয়ে আমিও কিছুক্ষণের জন্য যুক্ত ছিলাম। ওই দিন তিনি আমাদের সবাইকে সতর্ক ও একতাবদ্ধ থাকতে বলেন। 

তাকসিম এ খান এখন কোথায় আছেন এ প্রশ্নে ডা. জাবেদ বলেন, ‘তিনি তার বাসায় নেই এটা বলতে পারি।’ 

তাকসিম এ খান সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইনে মিটিং করে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। নিজ দপ্তরে না এলেও তিনি গত ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় নিজের অনুগত একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন বলে ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন। 

নথিপত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলমের নাম আলোচিত। তবে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এসব কথা ছাড়ানো হচ্ছে।’ 

শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন তাকসিম এ খান, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ফলে তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে। বলা হচ্ছে, বিএনপিপন্থি হিসেবে দাবিদার ওয়াসার দুজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বর্তমানে তাকসিমের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। 

অন্যদিকে তাকসিমকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত রবিবার কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, তাকসিমের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কয়েকজন চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে আদালতের আদেশ নিয়ে আসার পরও চাকরি করতে দেওয়া হয়নি।

ঢাকা ওয়াসা যেন তাকসিমের সাম্রাজ্য 

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গত প্রায় ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী তিনি। আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং গত বছর তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় বিদায় নিতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে।

সে সময় বোর্ড চেয়ারম্যানের অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার জন্য এক বিবৃতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান তখন বলেছিলেন, ‘স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিকভাবে উত্থাপিত হলেও প্রতিকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অদৃশ্য শক্তির প্রভাব বলয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতাকে জবাবদিহিহীনতার রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।’

কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যানের অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ায় টিআইবি অপর এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, ‘ওয়াসা চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে “ওয়াসা পরিচালনায় এমডির ইচ্ছা-ই শেষ কথা, আর নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় যে কাউকে ওয়াসা থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা ওয়াসা এমডির রয়েছে”Ñ এই অভিযোগকেই প্রতিষ্ঠিত করা হলো।’ 

তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে।

তাকসিমের মাসিক বেতন বর্তমানে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা।

দুদকের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে ১২ দফা সুপারিশ করে। কিন্তু সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক দলের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, নকশা অনুযায়ী কাজ না করা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এসব কাজের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকছে। দুদকের প্রতিবেদনে ওয়াসার প্রকল্পে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির কথা উঠে আসে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা