প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৫৭ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৯ পিএম
বুধবার রাজধানীর খামারবাড়িতে ডিএই’র হলরুলে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারি ঐক্য পরিষদ। প্রবা ফটো
দুর্নীতিবাজ ও স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ১৭টি অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে এখাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ ও অপসারণ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের যোগ্য পদে পদায়নের দাবিও করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির ডিএই’র হলরুলে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ডিএই’র অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ও রেজাউল করিম, উপ পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ ও লিখিত বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ ড. মো. আরিফ মাহমুদ মিতু প্রমুখ।
মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করেছিল তারা সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে যোগ্যতারভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদায়ন করবেন। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের কোন কার্যকারিতা শুরু হয়নি। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার (বুধবার দুপুরে কৃষিসচিবের নিয়োগ বাতিল করা হয়), তার স্বামী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ বখতিয়ার, ডিএইর ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)সহ কোন পদেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ করা হয়নি। বিগত ১৫-১৬ বছরে কৃষিখাতের যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে তা শেষ করা হচ্ছে না। অনতিবিলম্বে এদের অপসারণ ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিবিদ বাহাউদ্দীন নাসিমসহ কৃষিসচিব ও ডিএইর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। যা সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থি। তারা ভয় ও লোভ দেখিয়েও অনেক কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছিল। তবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায়ও গিয়েছিল তাদের কথা আলাদা।
আরিফ মাহমুদ মিতু বলেন, কৃষিখাতে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৬০ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ডিজিও নিয়োগ করা হয়েছিল। এসব বন্ধ করতে হবে। সিনিয়রিটি ও যোগ্য ব্যক্তিদের ডিজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে পদায়ন করতে হবে।
ড. শাহিনুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি সেক্টরের কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেককেই ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইচ্ছা হলেই সব তথ্য দেওয়া যেতো না। একটি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা হতো। তিনি বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বাতপত্র প্রকাশ করবো। তা ছাড়া কৃষিযান্ত্রিকীকরণ, প্যাকেজিং ল্যাবের দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করছে।
লিখিত বক্তব্যে আরিফ মাহমুদ মিতু বলেন, ইতোপূর্বে ২০১ জন কৃষিবিদের স্বাক্ষরে বর্তমান সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ উইং এর পরিচালক খাইরুল আলম প্রিন্স। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে কৃষির বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। এদের চক্রান্তে সারা দেশে কৃত্রিম সার সংকট তৈরির অপচেষ্টা চলছে। এমতাবস্থায় খামারবাড়িসহ কৃষি সেক্টরের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবর্তন করা অতীব জরুরি। তা না হলে সারা দেশে কৃত্রিম সার সংকটসহ বিভিন্ন সংকট তৈরি করে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলতে পারে নাসিম-রাজ্জাক-ওয়াহিদা-বাদল চক্র। তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মত পরিচালনা করতেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকতাদের প্রশাসন ও অর্থসংশ্লিষ্ট পদে পোস্টিং দিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করতেন। মেধাবী, যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা, চাকুরী হতে বরখাস্ত ও কোর্টের রায় পুনর্বহালের তোয়াক্কা না করাসহ বিনা কারণে পার্বত্য অঞ্চলে ৫-১০ বছরের বেশী সময় দায়িত্বে রেখে হয়রানী করেছেন। ভিন্নমতাবলম্বীদের বিনা কারণে জামাত শিবির, বিএনপি ট্যাগ দিয়ে হয়রানী করতেন। প্রকল্প পরিচালক ও বিভিন্ন উইং এর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে যোগ্যতা বিবেচনা না করে দলবাজদের নিয়োগ প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন, প্রকাশ্যে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য বিশেষ করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি ও ড্রাইভার নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। কৃষিসচিব তার স্বামীকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর চেয়ারম্যান হিসেবে অনেক সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগে ২ বার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। চাকুরীবিধি অমান্য করে পেনশনযোগ্য অফিসারদের কাঙ্খিত কর্মস্থলে পোস্টিং না দিয়ে মানসিক যন্ত্রনাসহ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন।
এ সময় তারা ৪ দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। তারমধ্যে ছিল সংবাদ সম্মেলন ও মৌন মিছিল। তাছাড়া বুধবার ও বৃহস্পতিবার ডিএই’র ডিজির অফিসের সামনে অবস্থান ও শুক্রবার আন্দোলনে নিহত হওয়া শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল।