ফসিহ উদ্দীন মাহতাব
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১১:০৩ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১১:০৪ এএম
ছবি : সংগৃহীত
সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের পিএস-এপিএস নিয়োগ আজ রবিবার (১১ আগস্ট) না হলে চলতি সপ্তাহে বাতিল হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রবিবার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের পিএস-এপিএস নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদেও রদবদল আসছে। এ ছাড়া প্রশাসনের সব স্তরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) অনেকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসনে আরও দুই ডজনের বেশি কর্মকর্তা বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছেন। এসব কর্মকর্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পূর্ণমন্ত্রী ২৫ জন এবং ১১ প্রতিমন্ত্রীর জন্য রাজনৈতিক বিবেচনায় পিএস-এপিএস দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আগে বাতিল করা হবে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হচ্ছে। এসব নিয়োগ আজ রবিবার না হলে চলতি সপ্তাহে বাতিল হচ্ছে। এ ছাড়া উপদেষ্টাদের পিএস-এপিএস নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, সরকারের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরা একজন করে একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। একান্ত সচিব সরকারি কর্মকর্তা হলে সহকারী একান্ত সচিব হন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের বেসরকারি ব্যক্তি। সাধারণত রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ কাউকেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এই পদে নিয়োগ দেন। গত ৮ জানুয়ারি একাধিক মন্ত্রী তাদের পছন্দসই কর্মকর্তাকে (সিনিয়র সহকারী সচিব-উপসচিব) একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) পাঠান। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে ডিও লেটার দেওয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য জনপ্রশাসন সচিবকে ফোন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানানো হয়। গত ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিরোধে একাধিক সুপারিশ পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। পরে তাতে কিছু মন্তব্যসহ পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধে রাজনৈতিক নিয়োগ পাওয়া সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদ বাতিলের কথা বলা হয়েছিল। মন্ত্রীদের বিভিন্ন অপবাদের প্রধান কারণ এসব এপিএস। এপিএসদের ক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের চেয়েও বেশি। দুদক বলেছিল, মন্ত্রীদের শতকরা ৭০ ভাগ এপিএসই নানা দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এরা মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে নানা অনিয়ম করে আসছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা আতঙ্কে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রশাসনের ৮৫ জন সচিবের মধ্যে ১৮ জন চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছেন। শুধু গত জুনেই মুখ্য সচিবসহ অন্তত চারটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই সিনিয়র সচিব মর্যাদায় সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির ‘প্রধান পরামর্শক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৫ জুলাই চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয় পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের। তাদের চুত্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তসহ আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা ব্যাপক আতঙ্কে আছেন। অনেকেই তাদের চাকরি ‘ভাগ্যের’ ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রশাসনে চুক্তিতে যারা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার। এ ছাড়া জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন, তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক। এদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। এদিকে আগামী অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করলে তিনি আর অক্টোবর পর্যন্ত থাকছেন না।