প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম
ছবি : সংগৃহীত
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আজ সোমবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আদালত তিন দিন বন্ধ থাকবে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসেও কয়েকদিন ছুটি ছিল। এরপর কয়েকদিন সীমিত সময়সূচিতে অফিস চলার পর আজ সোমবার থেকে আবারও তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো।
গতকাল রবিবার বিকালে সরকারের নির্বাহী আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আজ সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং সারা দেশের নিম্ন আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে প্রধান বিচারপতি প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো স্থানে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসাতে পারবেন। এছাড়া মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সারা দেশের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা থাকবে।
এছাড়া সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য কার্যকর হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বন্ধ বিচার বিভাগ
গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নির্দেশক্রমে এক বিজ্ঞপ্তিতে চলমান কারফিউ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের সব আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ ও দেশের সব অধস্তন আদালতগুলোর বিচারিক কার্যক্রম এবং দপ্তর ও শাখাগুলো এখন থেকে বন্ধ থাকবে।
তবে এ সময় প্রধান বিচারপতি জরুরি বিষয়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
নির্বাহী আদেশে তিন দিনের সাধারণ ছুটি
সাধারণ ছুটি সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাহী আদেশে এই ছুটি দেওয়া হয়েছে। ছুটির শর্তগুলো আগের ছুটির মতোই। এ সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবে। এছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এই সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরাও এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলোও এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ সময় আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দেবে।
ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বন্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার পর আজ সোমবার থেকে আবার তিন দিনের (৫, ৬ ও ৭ আগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছুটির সময় দেশের সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে এবং পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে না। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) এ সময় বন্ধ থাকবে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালনের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় সকালের পর ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার নিরাপত্তার অভাবে অনেক ব্যাংক তাদের কিছু শাখা খোলেনি। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন দিন বন্ধ থাকলেও এ সময় চালু থাকবে ব্যাংকের এটিএম বুথ। ফলে গ্রাহকেরা প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারবেন। পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু থাকবে।
সব পোশাক কারখানাও বন্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে বলেছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
সেখানে বলা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক-কর্মচারী ভাইবোনদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল পোশাক শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার জন্য মালিক ভাইবোনদের অনুরোধ করা হলো।’
সার্বক্ষণিক কারফিউ
এক দফা দাবিতে গতকাল রবিবার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে সার্বক্ষণিক কারফিউ জারি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য কার্যকর হবে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে এ আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে গত ৩১ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক সময় ধরে চলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। এ সময় এলাকাভেদে আলাদাভাবে বিরতি (শিথিল) দিয়ে কারফিউ বহাল ছিল।