প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২২:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২৩:২২ পিএম
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সন্ত্রাস-সংঘাত-সহিংসতা নয়, চাই শান্তি- সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। ছবি : সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানানো হয়েছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা থেকে। শনিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সন্ত্রাস-সংঘাত-সহিংসতা নয়, চাই শান্তি- সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আলোচনায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ভদন্ত জ্ঞানানন্দ মহাথের, ডা. ইউসুফ রাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, রোবারেট মার্টিন অধিকারী, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রমুখ।
আলোচনা সভায় সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য, সাংবাদিক আলী হাবিব ও ফরহাদ মাহমুদের লেখা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপধ্যায়। তিনি বলেন, এই যে এত সহিংসতা, সংঘাত, নৈরাজ্য, মৃত্যু- এর দায় কে নেবে? দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কী কোনো দায় নেই? রাজনীতি কেন এত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবে? এতে লোকসানটা কার? দেশেরই তো। কোটা আন্দোলনের মধ্যে অপরাজনীতি ঢুকিয়ে দেশের একটি প্রজন্মকে রাজনীতির প্রতি তো বটেই, রাজনীতিকদের প্রতিও বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে৷ এর ফল কী হবে?
তিনি বলেন, রাজনীতিবিমুখ হবে আগামী প্রজন্ম। মেধাবী একটি প্রজন্ম রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তার বদলে সামাজিক দুষ্কৃতিতাকারিরা হয়তো নিজেদের স্থায়ী আসন করে নেবে রাজনীতিতে। রাজনীতি চলে যাবে নষ্টদের দখলে। বুদ্ধিবৃত্তির বদলে পেশিশক্তি স্থায়ী হবে। এভাবে সহিংসতা কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে না। শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন ও দেশপ্রেমিক। তাই নবীন প্রবীণ হাত ধরাধরি করে চলতে পারলে বাংলাদেশ কখনোই পথ হারাবে না।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘আমরা আজকে বাংলাদেশে যা দেখলাম তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। নতুন প্রজন্ম, তাদের পূর্ব পুরুষদের যে ভূমিকাই থাকুক না কেন? তাদের তো দেশটাকে ভালবাসার কথা ছিল। কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না নতুন প্রজন্ম বলবে, তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে, আমার কোনোভাবেই সেটা কামনা করি না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো দল বা ব্যক্তির নয়। তাহলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে কীভাবে। আমরাকি এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। অনেক শ্রদ্ধাবান মানুষ কীভাবে বললেন, হেলিকপ্টার থেকে চার তলা বাসায় গুলি করা হয়েছে। যেটি কোনোভাবে সম্ভব নয়। এভাবে আসলে দেশ বিদেশে আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই ভায়োলেন্স করা যাবে না, তাহলে সত্যের মৃত্যু ঘটবে। কোনো ধর্মেই অশান্তির কথা বলা হয়নি। অশান্তি ও সংঘাত করে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় তারা।
তিনি বলেন, ‘আমি সরকার, আইন, বিচার মানি না। কিছুই মানি না। আমি যেটি চাই সেটি দিতে হবে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। তাহলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো থাকার কী দরকার আছে। আন্দোলন করেন। কিন্তু সহিংসতায় যাবেন না। শান্তি চাই। সহিংসতা নয়। দেশের সম্পদ রক্ষা করে আন্দোলন করেন।’
অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি একজন শিক্ষার্থী যেন কারাগারে না থাকে। যারা সহিংসতায় নিহত হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নিরাপরাধ শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আহ্বান শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান।’
মুস্তাফিজ শফি বলেন,‘আমরা সবসময় একটু দেরি করে ফেলি। এখানেও দেরি হয়ে গেছে। তারপরও আলোচনার মাধ্যেমেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মসংশোধনের পথে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হারতে পারে না। হারবে না। আমি বিশ্বাস করি, এই প্রজন্মই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে। তাদের ভাষা আমাদের বুঝতে হবে। সব মৃত্যুরই সুস্ঠ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ঘোলা পানিতে কারা মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে তাদেরকেও খুঁজে বের করতে হবে।’