× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিশু-কিশোরদের গ্রেপ্তারে লঙ্ঘিত হচ্ছে আইন

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ১০:২৬ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র, বয়স ১৬ বছর। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মামলার এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ২৩ বছর। শুধু তাই নয়, পুলিশ একই মামলায় গ্রেপ্তার আরও দুই শিক্ষার্থী মামুন ইসলাম ও মিম ইসলামের বয়স দেখিয়েছে ১৯ বছর। সদ্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দুজনেরই প্রকৃত বয়স ১৭ বছর।

তিনজনকেই হাতকড়া পরানো অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮ বছরের কম বয়সি অনেক শিশু-কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকের ক্ষেত্রেই প্রচলিত শিশু আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যেমন- শিশু আইনে, ১৮ বছরের কম বয়সের কাউকে গ্রেপ্তার করে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সঙ্গে একই গাড়িতে তোলা বা একই স্থানে রাখা যাবে না বলে উল্লেখ আছে। অনেক ক্ষেত্রেই আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। আর এসব ঘটনা সর্বস্তরে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

শিশু আইন ২০১৩ তে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু হিসেবে গণ্য হবে। গ্রেপ্তার করার পর কোনো শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাবে না। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গ্রেপ্তার কিংবা আটক শিশু ছাত্রদের ক্ষেত্রে সে আইন মানছে না পুলিশ। আটক থেকে শুরু করে আদালতে নেওয়া পর্যন্ত আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের হাতকড়া পরানো আইনের ব্যত্যয়। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুদের সুরক্ষার মধ্য দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা উচিত।

২০১৩ সালের শিশু আইনে ৪৪-এর (৫) ধারায় আরও বলা আছে, গ্রেপ্তার হওয়া শিশু নিরাপদ স্থানে আটক রাখার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক বা ইতোমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এইরূপ কোনো অপরাধীর সঙ্গে রাখা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আটক সব শিশুকেই প্রাপ্তবয়স্ক আসামি বা অপরাধীদের সঙ্গে রাখা এবং একই প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। শিশু আইনে আরও বলা আছে, শিশু-আদালতের আসন বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে, যেন সব শিশুর বিচার প্রক্রিয়ায় তার মাতা-পিতা, অভিভাবক বা আইনজীবীরা শিশুর পাশে বসতে পারেন।

এই আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের গ্রেপ্তার ইত্যাদি প্রসঙ্গে ৪৪-এর (৩) এ বলা হয়েছে, শিশুকে গ্রেপ্তার করার পর গ্রেপ্তারকারী পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারের কারণ, স্থান, অভিযোগের বিষয়বস্তু ইত্যাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করিবেন এবং প্রাথমিকভাবে তাহার বয়স নির্ধারণ করে নথিতে লিপিবদ্ধ করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, গ্রেপ্তার করার পর কোনো শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাবে না। 

এ ছাড়াও শিশু আইনের ১৯ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, শিশু-আদালত কর্তৃক শিশুর বিচার চলাকালীন আইনজীবী, পুলিশ বা আদালতের কোনো কর্মচারী আদালত কক্ষে তাহাদের পেশাগত বা দাপ্তরিক পোশাক (ইউনিফরম) পরিধান করতে পারবেন না। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, শিশুদের আটক করা থেকে আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এই আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। 

নীলফামারীতে গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চৌরঙ্গী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ঘটে। এসময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরের দিন ১৬ জন নামীয়সহ অজ্ঞাত দুই হাজারের বেশি আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় নিবিড়, মামুন ও মিম নামের তিন শিশুকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার তিন শিক্ষার্থীর পরিবার তাদের সন্তানদের অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে গত ৩০ জুলাই বিচারক তাদের জামিন দেন।

সহিংসতার সময় যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি ফজল প্রধান ২৪ জুলাই একটি মামলা করেন। ওই রাতেই মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ১৭ বছর বয়সি হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে। দুই দিন পর গত ২৭ জুলাই অন্যান্য আসামির সঙ্গে তাকেও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালতও পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে ফাইয়াজকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে পরদিন রিমান্ড বাতিল করে তাকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার জামিন মেলেনি। জানা গেছে, মামলার এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। কিন্তু জন্মনিবন্ধন অনুসারে ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। অর্থাৎ তার বর্তমান বয়স ১৭ বছর ৩ মাস।

ভোলায় সহিংসতার ঘটনায় ১৯ জুলাই রাতে সদর মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। ২৩ জুলাই আকবর হোসেন সাগর নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। গত বুধবার ১৮ বছরের কম বয়সি সাগরকে জামিন দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক অন্য আসামিদের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাগরের আইনজীবী মো. ইউসুফ জানান, সাগরের বয়স ১৭ বছর ১ মাস। সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কোনো ধরনের নাশকতার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।

এ ছাড়াও গত ২২ জুলাই ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বড় ভাইকে না পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছোট ভাই আবু রায়হানকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

শিশুদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুসরণ না করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় আমরা দেখলাম ১৮ বছরের নিচে অনেক শিশু-কিশোর গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, সহিংসতার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিশু আইনে অথবা কিশোর অপরাধীদের আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শিশু আইনে যা আছে তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ এদের হাতকড়া পরানো যাবে না। অর্থাৎ এমন কোনো আচরণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করবে না, যাতে ওই শিশুর মনে অপরাধীর চিহ্ন বা পরিস্থিতি কোনো ধরনের দাগ না ফেলে। তার সংশোধনের সুযোগ রাখা, তাকে আদালতে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও বয়সের বিষয়গুলো বিবেচনা করে উপস্থাপন করতে হবে।

এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এক্ষেত্রে আমরা দুটো বিষয় লক্ষ্য করিÑ প্রথমত, দুয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীকে পুলিশ যেভাবে আদালতে উপস্থাপন করছে সেটি যে আইনের ব্যত্যয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শিশু আইনে যা বলা আছে, সেভাবে করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, শিশু বা কিশোর যে অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে সেই অভিযোগের ভয়াবহতা কেমন। আমরা অতীতে দেখেছি, বয়সে কিশোর হলেও তার অপরাধের ব্যাপ্তি অনেক বড়। তাকে আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পুলিশের মধ্যে ভয় কাজ করে। ভয়ের অন্যতম হলোÑ যদি অভিযুক্ত পালিয়ে যায় অথবা তাকে কোনোভাবে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন পুলিশকেই দোষারোপ করা হয়Ñ কেন অতি সতর্কতা গ্রহণ করা হলো না। এমন উদাহরণও আমরা অতীতে দেখেছি। তবে অতি সতর্কতা হিসেবে শিশু বা কিশোর অপরাধীদের হাতকড়া পরাতে হবেÑ এটার পক্ষপাতী কিন্তু আমরা নই। তাদের অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স দিয়ে বা একটা সুরক্ষার মধ্য দিয়ে আদালতে উপস্থাপন করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

গত ১৭ জুলাই রিকশায় বাসায় যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দুই শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সৃজন ও মাহতাব জামাল মাহিনকে আটক করে পুলিশ। প্রথমে তাদের যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়। ওই দিনই তাদের জামায়াত-বিএনপির সহিংসতার পুরানো এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরিবারের দাবি, দুজনের কারওই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। তারা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। 

রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৯ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় গত বুধবার বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। মাহিমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। টানা ১৩ দিন সাধারণ জেলে থাকার পর গত বৃহস্পতিবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোররা অপরাধমূলক কাজ করলে বিচারের জন্য শিশু আদালতে পাঠাতে হবে। আদালত জামিন না দিলে সাধারণ জেলে না রেখে টঙ্গীতে (শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে) পাঠাতে হবে। কিন্তু আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে তো টানা ১৩ দিন সাধারণ জেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ফাইয়াজের ক্ষেত্রে তার বিচার শিশু আদালতে না হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হয়েছে, যা পুরোপুরি আইন বহির্ভূত। পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পর আদালতে হাজির করার মাধ্যমেও আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আইনে অনেক কিছু লেখা আছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়েও অনেক কিছু লেখা আছে। কিন্তু এখন তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওইগুলোর তোয়াক্কা করে না। যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকে, গণতন্ত্র দুর্বল বা সীমিত থাকে; সেই সব দেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের ঊর্ধ্বে কাজ করে। যেখানে কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। সেখানে আইনের লঙ্ঘন স্বাভাবিক। এটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত, অবশ্যই বেআইনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা