প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৯:০২ পিএম
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৯:০৬ পিএম
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি; আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক। কারণ, আমি জানি এতে আমার কোনো ঘাটতি ছিল না।’
বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে আমরা ইতোমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারণ, দাবির অপেক্ষা আমি রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়ে দিয়েছি। আগে একজন বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। এখন আরও দুইজন লোকবল বৃদ্ধি করে তাদের তদন্তের পরিধি আরও বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কোটা সংস্কার করে জারি করা প্রজ্ঞাপন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আলোচনায় বসেছিল (আন্দোলনকারী) তাদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করেছি এবং তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। দাবি মানব কী, যেটা আমিই বাতিল করে দিয়েছি। এটা তো আমারই (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন) ইস্যু করা। আপিল করা হয় আপিল বিভাগে এবং সেখানে হাইকোর্টের রায় (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল) স্থগিত করে দিয়ে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়। কাজেই কোটা না থাকায় আমার জারি করা প্রজ্ঞাপনটাই আবার কার্যকর হয়। পরে আপিল বিভাগে থেকে সেটার রায়ও দিয়ে দেওয়া হয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, এই আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, ধবংসাত্মক কাজ করা হয়েছে তাতে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন?’
‘আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো?’ সে প্রশ্ন উত্থাপন করে এর বিচারের ভার দেশবাসীর কাছে দিয়ে দেন তিনি।
’৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে গুলি, বোমা পুঁতে রেখে গ্রেনেড হামলা করে তাকে বহুবার হত্যা প্রচেষ্টার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবন যাপনকে আরও সহজ করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য ছিল। কিন্ত যেসব জিনিষগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পিছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐ ৭১ এ যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সব থেকে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি, স্বজন হারাবার বেদনা আমি বুঝি। তাই যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে। স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে সেগুলোতো পুনর্গঠন করা যাবে কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো তো আমরা আর ফিরে পাব না।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘জাতীয় মৎস পদক-২০২৪’ প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে ছয়টি স্বর্ণ, আটটি রৌপ্য ও আটটি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক এবং পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জেলেদের মধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ডও বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই জাতির পিতা এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেমন কৃষি গবেষণা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, পাশাপাশি, জনগণের পুষ্টির অধিকারও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি (জাতির পিতা) বলেছিলেন, ‘মাছ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি সম্পদ।’
বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক এলাকার গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে মৎস ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে যতরকম সুযোগ সুবিধা লাগে তার ব্যবস্থা সরকার করবে। কারণ, এটা আমাদের কাজে লাগবে।’
সূত্র- বাসস